গত এক সপ্তাহ ধরে করোনা আতঙ্কে কাঁপছে গোটা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। একের পর এক চিকিৎসক ও নার্সের করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর উপযুক্ত সুরক্ষা ও কোয়ারেন্টাইনের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। এবার হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হওয়ার মানচিত্র তুলে ধরে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চরম অপদার্থতার অভিযোগ তুললেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মঙ্গলবার এক প্রেস বিবৃতিতে তাঁরা জানিয়েছেন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ৩ জন করোনা রোগীর থেকে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন চিকিৎসক ও নার্স।
করোনার চিকিৎসায় রাজ্য সরকার ICMR-এর নির্দেশিকা মানছে না বলে বেশ কয়েকদিন ধরে সরব হয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, লাল ফিতের ফাঁসে ফেলে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। যার ফলে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ঘটে ঠিক সেই ঘটনাই। জেনারেল ওয়ার্ডে থাকা করোনা রোগীর থেকে সংক্রমিত হন একের পর এক চিকিৎসক ও নার্স। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় ওই রোগীদের দ্রুত আইসোলেশনে পাঠানো যায়নি।
এরই মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জারি প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘তিন জন রোগীর থেকে ১১ জন চিকিৎসক ও নার্সের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অপদার্থতা প্রমাণ করে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যাদের সব থেকে বেশি তাদের বাঁচাতে কোনও ব্যবস্থা হয়নি। করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা যায়নি হাসপাতালে।’
জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে N95 মাস্ক দেওয়ার নির্দেশ দিলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করছে। PPE ছাড়াই আউটডোরে চিকিৎসা করতে হচ্ছে ডাক্তারবাবুদের।
অভিযোগের জবাবে মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘করোনা নিয়ে প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সচেতনতা কম ছিল। পরে তা মিটে গিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘স্ত্রীরোগ বিভাগ থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। যে রোগীদের থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে তাদের ভর্তির সময় কোনও উপসর্গ ছিল না। পরে উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করানো হয়। আইসোলেশন ওয়ার্ডের বাইরে রোগীদের চিকিৎসার সময় উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন না করায় চিকিৎসক ও নার্সরা সংক্রমিত হয়েছেন। তবে আমি ইন্টার্নদের দোষ দেব না। ওদের অভিজ্ঞতা নেহাতই কম।’
তিনি বলেন, এখন সমস্ত রোগীকেই COVID 19-এ আক্রান্ত বলে ধরে নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সমস্ত ওয়ার্ডেই এই বিধি জারি হয়েছে। করোনার হটস্পট থেকে কোনও রোগী এলে তাকে আগে আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।‘
সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, আপাতত ইন্টার্নদের কাজে নামাবে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে চলবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপক করোনা পরীক্ষা। হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও মেডিসিন বিভাগ বন্ধ রাখা হয়েছে। স্ত্রীরোগ বিভাগে এক করোনা আক্রান্ত প্রসূতি কয়েকদিনের মধ্যেই সন্তানের জন্ম দেবেন। এছাড়া হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে ভর্তি এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর করোনা ধরা পড়েছে। হাসপাতালের ৪৪ জন নার্স ও জুনিয়র ডাক্তারকে কোরায়েন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।