ট্রেন বন্ধ। অথচ সোমবার থেকে খুলছে অফিস-কাছারি। আর তার আগেই এল কিছুটা স্বস্তির খবর। সোমবার থেকে ২,০০০ বেসরকারি বাস পথে নামাচ্ছেন বাসমালিকরা। রবিবার পরিবহণ দফতরের সঙ্গে বৈঠকের পর বাসমালিকদের সংগঠনের তরফে একথা জানানো হয়েছে।
এখনই বাসভাড়া বৃদ্ধির কথা ঘোষণা না করলেও বাসমালিকদের দাবি মেনে তৈরি করা হয়েছে রেগুলেটরি কমিটি। তাতে পরিবহণ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে রয়েছেন বাসমালিক সংগঠনের সদস্যরাও। বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবি বিবেচনা করতে সোমবার প্রথম বৈঠকে বসবে এই কমিটি। সেই আশ্বাসেই ২,০০০ বেসরকারি বাস রাস্তায় নামাতে রাজি হয়েছেন বাসমালিকরা।
বাস চালানো নিয়ে প্রায় মাসখানেক ধরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বাসমালিকদের মতানৈক্য চলছে। লকডাউন তোলার ঘোষণার সময় মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে ঘোষণা করেন, 'বাসের ভাড়া মালিকরা ঠিক করবেন। তাতে যে চড়তে পারবে চড়বে। যে পারবে না, চড়বে না।' মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যে বিরোধীরা সরব হয়। এরই মধ্যে বাসভাড়া তিনগুণ বাড়ানোর দাবি সরকারের কাছে পেশ করেন বাসমালিকরা। তৈরি হয় নতুন ভাড়ার তালিকা। তাতে ন্যূনতম ভাড়া ৬ টাকা থেকে বেড়ে হয় ২০ টাকা।
এর পরই ভাড়াবৃদ্ধির প্রস্তাব খারিজ করে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, 'ভাড়াবৃদ্ধির দাবি মানবে না সরকার। পুরনো ভাড়াতেই চালাতে হবে বেসরকারি বাস।' সেভাবে বাস চালানো সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন বাসমালিকরা। সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তারা বলেন, ২০ জন যাত্রী নিয়ে বর্তমান ভাড়ায় বাস চালিয়ে সরকার লাভ করে দেখিয়ে দিক।
এরই মধ্যে বাসমালিকদের ডেকে বোঝানোর চেষ্টা করে সরকার। তবে মালিকদের তরফে স্পষ্ট করা হয়, নতুন করে কোনও ভাড়াবৃদ্ধির প্রস্তাব দেবেন না তারা। সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকেই। সেজন্য রেগুলেটরি কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেন বাসমালিকরা। সরকার সেই প্রস্তাব মানায় গত সপ্তাহের প্রথম দিকে রাস্তায় কিছু বেসরকারি বাস নামে। কিন্তু সপ্তাহ যত এগিয়েছে তত রাস্তায় কমেছে বেসরকারি বাস। ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। মালিকদের দাবি, ঘরের থেকে টাকা দিয়ে বাস চালানো সম্ভব নয়।
এরই মধ্যে সরকারের সঙ্গে বৈঠক সন্তোষজনক বলে জানিয়ে ২,০০০ বাস রাস্তায় নামানোর ঘোষণা করলেন মালিকরা। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন বাসগুলি না চলায় বহু বাস বিকল হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া শহরতলি থেকে যে সব বাসকর্মীরা কলকাতায় আসতেন ট্রেন না চলায় তারা আসতে পারবেন না। ফলে সব বাস নামানো সম্ভব নয়। কলকাতা শহরে প্রায় ৫,৫০০ বেসরকারি বাস চলে। তার মধ্যে ২,০০০ বাস পথে নামবে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে জনমানসে যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল বাসভাড়া বাড়ালেই তা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করবে বিরোধীরা। তাছাড়া ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে মালিকদের দাবি মেনে রাতারাতি বাসভাড়া বাড়িয়ে দিলে পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ভাড়া কমানোর প্রস্তাবে তাঁরা বেঁকে বসতে পারেন। ট্রেন চললেও বাসের চাহিদা কমবে। তাই এই মাসটা জল মাপতে চাইছে সরকার। বাসমালিকদের মুখরক্ষার জন্য যদিও রেগুলেটরি কমিটির মিটিং-মিটিং খেলাটা চলবে।