ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল মাসদুয়েকের শিশু। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরিণতি যে এত নির্মম হবে, তা হয়ত প্রথমে ভাবতেও পারেননি শিশুটির মা–বাবা। ছেলেকে মৃত্যুমুখে যেতে দেখে এক হাসপাতাল থেকে অপর হাসপাতালে ছোটাছুটি শুরু করেন তাঁরা। শেষপর্যন্ত অসাধ্য সাধন করল কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতাল। ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে ওই একরত্তি শিশু।
সবে হামাগুড়ি দিতে শুরু করেছিল অরিজিৎ। তখন তাঁর শরীরে বাসা বাঁধতে থাকে অদ্ভূত অসুখ। অরিজিতের মা–বাবা লক্ষ্য করতে থাকেন, ঘাড় ঝুলে পড়ে যাচ্ছে। চিবুক বেয়ে অনবরত লালা পড়ছে। কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে ছেলে। দেখেই ভয় পেয়ে যান অরিজিতের মা–বাবা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে প্রথমে কৃষ্ণনগরের স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে। সেখানেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভরতি করানো হয় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহা শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা করেন। বুঝতে পারেন, শিশুটি ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে শিশুটির শরীরে বিরল অসুখ দানা বাঁধে। অসুখের নাম অ্যাকিউট ডিসেমিনেটেস এনসেফেলোমাইলাইটিস। এর ফলে কৃষ্ণনগরের এই শিশুটির দেহে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে অরিজিতকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। শিশুটির মস্তিষ্কের এমআরআই করা হয়। তাতে গ্রে ম্যাটার পরিবর্তিত হচ্ছে। টানা ১৪৪ ঘণ্টা শিশুটিকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। ভেন্টিলেশনে রাখার পাশাপাশি শিশুটির রক্তচাপও স্বাভাবিক রাখা হয়। ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশান দেওয়া হয় শিশুটিকে। সেই সঙ্গে শিশুটির দেহে স্টেরয়েডের প্রয়োগও করা হয়।
শিশু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, প্রথম দিকে খাবার খাওয়ার অভ্যাসই ভুলতে বসেছিল শিশুটি। দীর্ঘ এক মাসের চিকিৎসায় শিশুটিকে খাবার খাওয়ার কৌশল শেখানো হয়। সেই সঙ্গে হাঁটতে চলতে পারার কৌশলও শেখানো হয় তাঁকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটি এখন অনেকটাই ভালো রয়েছে। বিপদ কেটে গিয়েছে। এখন অরিজিতকে কথা বলতেও শেখানো যাবে। চিকিৎসকদের মতে, করোনা পরিস্থিতিতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনও নেওয়া দরকার।