‘দু্য়ারে সরকার’ কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে প্রকল্পগুলি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। এই কর্মসূচির মধ্যে দীর্ঘ লাইন পড়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য। এখনও রাজ্যের সব মানুষের মেডিক্লেম নেই। অনেকের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তাই বেসরকারি বা সরকারি হেলথ স্কিমে যেতে পারেননি। কারণ বছরে যে প্রিমিয়াম দিতে হয়, তার সামর্থ্য নেই। আবার কোভিড পরিস্থিতিতে এই মেডিক্লেমের অঙ্ক অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে সংস্থাগুলি। যার জেরে প্রায় দ্বিগুণ প্রিমিয়াম দিতে হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এক, সরকারি হাসপাতালে তো সবই বিনামূল্য। তাহলে এই কার্ডের মূল্য কী? দুই, বেসরকারি হাসপাতালে এই কার্ড চলবে তো?
আগে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আসার জন্য অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালকে বহু অনুরোধ করতে হত। এবার সেখানে কার্যত বিনা অনুরোধেই চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে নতুন ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথীর অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়ে আবেদন করেছে। যা এককথায় রাজ্য সরকারের সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।
‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে মানুষ সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির একটা বড় অংশের আশঙ্কা, এই প্রকল্পে বিভিন্ন চিকিৎসার বেঁধে দেওয়া খরচ না বাড়িয়ে সকলকে কার্ড বিলি করায় স্বাস্থ্য পরিষেবাই পুরোপুরি বেলাইন হয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ১ ডিসেম্বর থেকে ২০ তারিখের মধ্যে ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল এই প্রকল্পে যুক্ত হতে চেয়ে আবেদন করেছে।
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত অর্থাৎ গত ১ এপ্রিল থেকে ২০ ডিসেম্বর— এই সময়ে ৭৬টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে মেডিকা, কোঠারি, স্পন্দনের মতো বেশ কিছু বড় ও মাঝারি মাপের হাসপাতাল। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৩০টি বেসরকারি হাসপাতাল। আর অগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২৬টি।
প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটালস অ্যাসোসিয়েশন–এর রাজ্য চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, ‘একপ্রকার বাধ্য হয়ে নথিভুক্ত হতে হচ্ছে। কারণ, যে হারে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড বিলি হচ্ছে, তাতে রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষের এই কার্ড থাকবে। সুতরাং এই প্রকল্পে না থাকলে হাসপাতালগুলি কার্যত রোগীই পাবে না।’
স্বাস্থ্যসাথীতে নথিভুক্ত প্রথমসারির হাসপাতালগুলি সূত্রে পাওয়া খবর, এখন ৬০ শতাংশ লোকের হাতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড রয়েছে। তাই কোনও হাসপাতালই এই প্রকল্প থেকে আলাদা হয়ে থাকতে চাইবে না। কারণ, সেক্ষেত্রে তাদের ব্যবসা মার খাওয়ার প্রভূত আশঙ্কা। কিন্তু পরবর্তীকালে অধিকাংশ হাসপাতালই চেষ্টা করবে, যে প্যাকেজগুলি আর্থিকভাবে পোষাচ্ছে সেগুলির রোগী ভরতি করতে আর কম প্যাকেজের রোগী এড়িয়ে যেতে। এই বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘এইসব ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা একটা নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। আলোচনা চলতে থাকবে।’