দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের দিকে এগোচ্ছে বিজেপি। রাজধানীতে ২৭ বছর পরে সরকার গঠন করতে চলেছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু দিল্লিতে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির হারে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক উদ্বেগের কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের আকার ও বৈশিষ্ট্যে একাধিক পার্থক্য থাকলেও তৃণমূলের কাছে বিষয়গুলি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ যখন বিজেপির মতো দল।
১. খয়রাতির রাজনীতির শেষের শুরু?
দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেই সরকারি টাকায় জনগণের জন্য একাধিক সুবিধা ঘোষণা করেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তার মধ্যে রয়েছে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলে ছাড়। মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাস যাত্রা। এ ছাড়াও রয়েছে নানা সুযোগ সুবিধা। এমনকী হিন্দু ভোট পেতে বিধানসভা নির্বাচনে জিতলে পুরোহিত মাসে ১৮ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেছিল আপ। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজল না। যাতে স্পষ্ট খয়রাতির রাজনীতি সর্বোপরি নয়। মানুষ অধিকার ও উন্নয়ন চায়।
২. তোষণের রাজনীতিকে ছারখার করে ভাগ হতে পারে মুসলিম ভোটও
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আপের মুসলিম ভোটের একাংশ কংগ্রেস ও AIMIMএর মধ্যে ভাগ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওখলা আসনে আপের আমানাতুল্লাহ খান মান বাঁচাতে পারলেও দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মিম। মুস্তাফাবাদে দিল্লি দাঙ্গায় অভিযুক্ত তাহির হোসেনকে প্রার্থী করেছিল মিম। সেখানে আপ ও মিমের ভোট কাটাকাটিতে জয় পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। অর্থাৎ মুসলিম ভোট সরতে পারে। আর সরলে কেজরিওয়ালের পরিণতি হতে পারে মমতারও।
৩. কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের রাজনীতি
ক্ষমতায় আসার পর থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতে জড়িয়েছে আম আদমি পার্টির সরকার। কেন্দ্রের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে নাম তুলে নিয়েছে তারা। এর ফলে আখেরে ক্ষতি হয়েছে দিল্লির সাধারণ মানুষের। কেন্দ্রের সঙ্গে লাগাতার বৈরী সম্পর্কে সাধারণ মানুষও বিরক্ত হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে দিল্লির মতো ব্যতিক্রমী রাজ্য যেখানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। সেখানে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়া মানে কুমিরের সঙ্গে লড়াই। একই ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছোট খাটো বিষয়ে লাগাতার কেন্দ্রের বিরোধিতা করে চলেছে। কেজরিওয়ালের মতো বুমেরাং হতে পারে মমতার এই কৌশলও।
৪. ইডি - সিবিআইয়ের প্রভাব
পশ্চিমবঙ্গের মতো দিল্লিতেও তাবড় নেতা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চলছে ইডি - সিবিআইয়ের তদন্ত। আবগারি দুর্নীতিতে সেখানে জেলে গিয়েছেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীষ সিসোদিয়া। যদিও তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে না পারায় ইডির বিরুদ্ধে বিরক্তি প্রকাশ করে ২ জনকেই জামিন দিয়েছে আদালত। পশ্চিমবঙ্গেও পরিস্থিতি একই রকম। ফলে দুর্নীতির সাজা হচ্ছে না বলে ভোটে ফল পড়ার আশঙ্কা কম বলে আর নিশ্চিন্ত থাকার উপায় রইল না তৃণমূল নেতাদের।
৫. দুর্নীতির অভিযোগ
পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লি ২ জায়গাতেই নেতা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে রয়েছে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তেমন প্রভাব পড়নি। তবে দিল্লি বলছে, ভবিষ্যতে যে প্রভাব পড়বে না সেই নিশ্চয়তা আর রইল না।