বিক্ষোভ দেখিয়ে কোনও লাভ হয়নি। এবার তাই আদালতের দ্বারস্থ হল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা! কারণ, জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষার আর মাত্র ক'টা দিন বাকি থাকলেও এখনও পর্যন্ত অ্যাডমিট কার্ডই হাতে পায়নি তারা!
এবছরের মাধ্যমিক শুরু হবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। এদিকে, প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী এখনও তাদের অ্য়াডমিট কার্ড হাতে পায়নি! বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পড়ুয়া, তাদের বাবা-মা এবং প্রধান শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, অনলাইনে ফর্ম ফিল-আপ করতে গিয়ে কিছু ভুল ত্রুটি হয়েছে। তার জেরেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। এবং তার ফলে এবছর মাধ্যমিক দেওয়ার কথা, এমন প্রায় ৫০ জন পরীক্ষার্থী অ্যাডমিট কার্ড হাতে পায়নি।
বিষয়টি নিয়ে আগেই মধ্যশিক্ষা পর্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এমনকী, পরীক্ষার প্রস্তুতি শিকেয় তুলে ডিরোজিও ভবনে মঙ্গলবার বিক্ষোভও দেখায় অ্য়াডমিট কার্ড না পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের অভিভাবকরাও। কিন্তু, তাতে লাভ কিছুই হয়নি। কারণ, পর্যদের তরফে নাকি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই বিষয়ে এখন আর কিছু করার নেই!
এই প্রেক্ষাপটে একপ্রকার বাধ্য হয়েই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু করার অনুমতি চায় ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা। বিষয়টির গুরুত্ব উত্থাপন করে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় উচ্চ আদালতে মামলা রুজু করার অনুমতি দিয়েছেন।
কিন্তু, প্রশ্ন হল - আদৌ কি এবছর পরীক্ষায় বসতে পারবে ওই ৫০ জন ছাত্রছাত্রী? আর, যদিও বা পরীক্ষায় বসতে পারে, তাহলেও পরীক্ষার ঠিক আগের মুহূর্তে বিক্ষোভ, আন্দোলন, আদালতের শুনানিতে জড়িয়ে পড়ার পর শান্ত মনে পরীক্ষা দিতে পারবে তারা? এতে তাদের কোনও সমস্যা হবে না তো?
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবারের (৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন ভুক্তভোগী পড়ুয়া ও তাদের বাবা-মায়েরা। কারণ, ওই দিনই এই মামলার শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের মুখে চিন্তিত অভিভাবকরা বলছেন, যদি এই টানাপোড়েনের জন্য তাঁদের সন্তানরা এবছর পরীক্ষায় বসতে না পারে, তাহলে তাদের একটা বছর নষ্ট তো হবেই। উপরন্তু, তারা যে মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাবে, তার খেসারত কে দেবে?
কেউ কেউ বলছেন, মাধ্যমিকে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে পরীক্ষায় বসছে। সেখানে কিছু ভুল-ত্রুটির জন্য যদি কোনও পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড পেতে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে কি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের উচিত নয় এগিয়ে এসে সেই সমস্যার সমাধান করা? তারা কি চাইলে এটা করতে পারত না? উলটে, তারা আর কিছু করা যাবে না বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে!
এক শিক্ষিকা জানিয়েছেন, অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে নথিভুক্তির ক্ষেত্রে স্কুলের তরফে কিছু ভুল হতে পারে। কারণ, তাদের কাছেও এটা একদম নতুন ব্যবস্থা। কিন্তু, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ যদি আরও একটু সহযোগিতা করত, ত্রুটি সংশোধনের একটা অন্তত সুযোগ দিত, তাহলে এতগুলো ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যেত না।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি চন্দন মাইতিকে উদ্ধৃত করে টিভি নাইন বাংলা পোর্টালে উল্লেখ করা হয়েছে, 'এর দায় সম্পূর্ণ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের। দীর্ঘদিন নির্বাচন না করিয়ে মনোনয়নের মাধ্যমে চলছে। কোনও নির্বাচন না করে অটোনমাস একটি বডি তৈরি করেছে। যদি কোথাও কোনও অঘটন ঘটে, রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়কে দায়িত্ব নিতে হবে।'
চন্দন মনে করেন, 'কেবল অনলাইনে একটা এডিট অপশন দিলেই কাজটা হয়ে যায়। সেটুকু করার ক্ষমতাও এই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নেই! ওরা ইগো-সেন্ট্রিক হয়ে গিয়েছে। অহংকারী মনোভাব দেখাচ্ছে।'