ভোট এলেই বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা বেড়ে যায়। বোমা বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে গুলি চলাচলের ঘটনা ঘটে। তাতে অনেকের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসির তরফে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, গত তিন দশকে বাংলায় ভোটের সময় বোমা বিস্ফোরণের ফলে কমপক্ষে ৫৬৫ জন শিশু নিহত অথবা আহত হয়েছে। এরমধ্যে অনেকেই বোমার হামলায় হাত পা হারিয়েছেন। এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিবিসি।
আরও পড়ুন: পিছু নিতেই পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে পরপর বোমা ছুড়ল দুষ্কৃতীরা, ত্রিবেণীতে ধৃত ২
মঙ্গলবার বিবিসির তরফে ‘চিলড্রেন অফ দ্য বোম্বস’ নামে একটি তথ্যচিত্রের আয়োজন করা হয়। ভোটের সময় বোমায় আহতদের নিয়ে এই তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে। বিবিসি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলায় এই সংখ্যক শিশু আহত বা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে মোট নিহতের সংখ্যা হল ৯৪ জন এবং বাকিরা আহত হয়েছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সময় বোমায় হতাহতের সংখ্যার কোনও পরিসংখ্যান উপলব্ধ নেই। বিবিসি জানিয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আনন্দবাজার পত্রিকা এবং বর্তমান পত্রিকার প্রতিবেদন খতিয়ে দেখে তারা এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ধরনের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বাগান, রাস্তা, খামার অথবা স্কুলের কাছাকাছি। সাধারণত এই সব বোমা বিরোধীদের ভয় দেখানোর জন্য নির্বাচনের সময় ব্যবহৃত হতো এবং লুকিয়ে রাখা হয়েছিল৷ সেগুলি বল ভেবে খেলতে গিয়ে অথবা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। হতাহতরা বেশিরভাগই হতদরিদ্র, গৃহকর্মী, চাকরিজীবী, কৃষক এবং শ্রমিকদের সন্তান
রিপোর্ট অনুযায়ী, পুচি নামে একজন বোমায় আহত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে কলকাতার একটি পার্কে এই ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় তার বয়স ছিল ৯ বছর। তিনি চার বন্ধুর সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিলেন। তখন একটি ব্যাগে কিছু গোলাকার বলের মতো বস্তু পেয়েছিলেন। বল ভেবে খেলতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তাতে তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এছাড়া, দুজন নিহত হয়েছিলেন।
পুচুর এক বন্ধু অভিজিৎ মণ্ডল এখনও নির্বাচন এলেই ভয় পান। বিবিসিকে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন মানে ভয় আর দাঙ্গা। তাঁর কথায়, আমি যদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতাম, তাহলে এটা চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিতাম। পৌলমি নামে আরও এক আক্রান্ত উপস্থিত ছিলেন বিবিসির তথ্যচিত্রে। পৌলমি জানায়, ২০১৮ সালে বোমা বিস্ফোরণে সে একটি হাত হারিয়েছিল। সেই সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর। সেও একইভাবে বল ভেবে খেলতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন।