ফ্ল্যাট পেতে চেয়ে বৃদ্ধ দম্পতি মালিককে প্রথমে হুমকি ও পরে মারধর করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তাদের ফ্ল্যাট থেকে পর্যন্ত বের করে দেওয়া হয়। বৃদ্ধ দম্পতি পুলিশে অভিযোগ জানালেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। উলটে বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়ার জন্য বৃদ্ধ দম্পতির উপর চাপ দিয়েছিল পুলিশ। আর তা না মানায় বৃদ্ধ দম্পতিকে অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশের তরফে নোটিশ জারি করা হয়। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ স্টেজে ক্যানসার থাকা সত্ত্বেও স্ট্রেচারে করেই বৃদ্ধকে যেতে হয় থানায়। সেই সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন বৃদ্ধ। আবেদনের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর মামলার তদন্তে গাইডলাইন কী? কত কেস আছে?রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের
জানা গিয়েছে, ঘটনাটি লেক থানার মহারাজা টেগোর রোডের। সেখানেই ফ্ল্যাট রয়েছে বৃদ্ধ দম্পতির। গত মার্চ মাসে দালালের মাধ্যমে আসা এক যুবককে তারা এক কামরার ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছিলেন। তবে বেশ কয়েক মাস সেখানে থাকার পর যুবক অক্টোবরের ফ্ল্যাট ছেড়ে দেন। তবে নভেম্বরে ফের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিতে চান ওই যুবক। এবার রাজি হননি বৃদ্ধ দম্পতি। তাদের একমাত্র মেয়ে পেশায় আইনজীবী। অভিযোগ ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে না চাওয়াই প্রথমে ওই যুবক তাদের হুমকি দেয় এরপর যুবক বৃদ্ধ দম্পতিকে মারধর করে তাদের ফ্ল্যাট থেকে পর্যন্ত বের করে দেয়।
ঘটনায় লেক থানায় অভিযোগ জানান বৃদ্ধ দম্পতি। এরপরেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সামনে আসে। বৃদ্ধ দম্পতির দাবি, পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরে যুবকের পক্ষে সওয়াল করে। যুবককে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেছিলেন তদন্তকারী অফিসার। ওসিও বিষয়টি মিটমাট করার পরামর্শ দেন। কিন্তু, বৃদ্ধ দম্পতি রাজি হননি। তখন পুলিশের তরফে তাদের অভিযুক্ত হিসেবে গত বৃহস্পতিবার নোটিশ পাঠিয়ে থানায় ডাকা হয়।
এদিকে, বৃদ্ধ ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ায় পুলিশকে বাড়িতে আসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনও মানবিকতা দেখায়নি পুলিশ। ফলে বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্স এবং স্ট্রেচার জোগাড় করে ক্যানসার আক্রান্ত বৃদ্ধকে থানায় যেতে হয় রাতেই।তবে তাদের অভিযোগ, থানায় গিয়ে তারা দেখেন ওই যুবক তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গেই চা খাচ্ছেন। কার্যত থানায় খাপ পঞ্চায়েতে বসিয়ে যুবককে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা না দিলে বৃদ্ধ দম্পতিকে হয়রানি করা হবে বলে পুলিশের তরফে হুমকি দেওয়া হয়।
পুলিশের অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে দ্বারস্থ হন বৃদ্ধ। তাঁর আইনজীবীদের দাবি, কোন দোষ না করা সত্ত্বেও তাদের রাত পর্যন্ত থানায় বসিয়ে রেখে মানসিক অত্যাচার করেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, ফের ১৭ ডিসেম্বর থানায় তলব করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি শোনার পর বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন। আগামী সোমবার এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।