প্রদেশ সভাপতির পদ ছাড়ার পরও কি বাংলায় বামেদের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা তিনিই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন পোড় খাওয়া কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী? বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় আয়োজিত দলীয় কর্মসূচির মঞ্চ থেকে কি সেই জন্যই বিশেষ বার্তা দিলেন বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও তাঁর দলীয় সহযোদ্ধাদের?
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এবং সেই ঘটনায় নিগৃহীতার দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে বামেদের আন্দোলন চলছে। একই দাবিতে রাস্তায় নেমেছে কংগ্রেসও। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় পাশাপাশি দুই শিবিরের সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এবং অধীররঞ্জন চৌধুরী।
বামেদের মঞ্চে মিনাক্ষীর বক্তৃতা যখন প্রায় শেষের দিকে, তখনই কংগ্রেসের মঞ্চে ভাষণ দিতে ওঠেন অধীর। এই মঞ্চ থেকেই পাশের মঞ্চে থাকা বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও তাঁর দলীয় সহকর্মীদের প্রতি সমর্থনের বার্তা দেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, আর জি কর কাণ্ডে কংগ্রেস ও বামেদের অবস্থান ও দাবি এক। তবে, তা প্রকাশের ধরন হয়তো ভিন্ন। উল্লেখ্য, অধীর যখন বামেদের প্রতি এই বার্তা দিচ্ছেন, তখন সেই মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন, তাঁর তুলনায় বয়সে ও অভিজ্ঞতায় অনেকটাই নবীন তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে তাঁরই উত্তরসূরি শুভঙ্কর সরকার।
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি নতুন প্রদেশ সভাপতির উপস্থিতি সত্ত্বেও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে নতুন করে বার্তা দেওয়া চেষ্টা করলেন অধীর? বুঝিয়ে দিলেন, পদ গেলেও এখনও তিনিই রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান স্তম্ভ?
এর পাশাপাশি, এদিনের দলীয় কর্মসূচির মঞ্চ থেকে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই ফের একবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করেন অধীর। তাঁর দাবি, আর জি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সিবিআই যে তদন্তভার নিয়েছে, রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও তার আওতায় আনতে হবে।
অধীরের মতে, এই ঘটনায় রাজ্য়ের প্রশাসনিক প্রধানকেও সিবিআই গোয়েন্দাদের জেরা করা উচিত। কেন মমতা সাতদিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা বলেছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অধীর।
উল্লেখ্য, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে থাকাকালীন কার্যত কেন্দ্রীয় লাইন থেকে সরে এসেই আগাগোড়া বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করে গিয়েছেন অধীররঞ্জন চৌধুরী।
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের দাবি, অধীরের এই একরোখা মমতা বিরোধিতার জন্যই হয়তো তাঁকে সরিয়ে, অপেক্ষাকৃত নরমপন্থী হিসাবে পরিচিত শুভঙ্কর সরকারকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করেছে হাইকম্যান্ড।
শীর্ষ নেতৃত্বের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেননি অধীরও। বদলে, এদিন নিজের আচরণেই কি নিজের গুরুত্ব আরও একবার বুঝিয়ে তিনি তিনি? বার্তা দিলেন, বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোটের সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতে তিনিই আসলে বড় ভরসা?