গত সপ্তাহের শেষে বাংলা সফরে এসে রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলে একের পর এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই পরিসংখ্যানের নিরিখে তিনি দাবি করে বলেছিলেন যে শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য— সবেতেই পিছিয়ে পড়েছে ‘একসময় এগিয়ে থাকা’ পশ্চিমবঙ্গ। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে অমিত শাহের একের পর এক বক্তব্য তুলে ধরে জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শেষে ‘সব উত্তর দিয়ে দিয়েছি’ বলে মজার ছলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গুজরাটি খাবার খাওয়া আবদার করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
সোমবারই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন যে মঙ্গলবার অমিত শাহের সব বক্তব্যের জবাব তিনি দেবেন। সেই কথা রেখে এদিন পয়েন্টে পয়েন্টে জবাব দিলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘ভারতে দারিদ্র দূরীকরণে বাংলা এক নম্বরে। ১০০ দিনের কাজ, গ্রামীণ আবাস ও রাস্তা নির্মাণে আমরা শীর্ষে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে এক নম্বরে বাংলা। বাংলা মানেই নাকি কাজ নেই। জেনে নিয়ে কথা বলা উচিত। বাংলা এখন ঝাঁ চকচকে।’
পরিসংখ্যানের জবাব পরিসংখ্যানে দিয়ে এদিন মমতা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেন, ‘আর কিছু জানার আছে? সব উত্তর কিন্তু দিয়ে দিয়েছি।’ এর পরই তিনি তাঁর অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে আবদার করে বলেন, ‘এর জন্য কিন্তু অমিত শাহকে আমাকে খাওয়াতে হবে। আমি গুজরাটি খাবার খেতে চাই। ধোকলা খুব প্রিয়। দীনেশদা (দীনেশ ত্রিবেদী) আর একটা খাবার খাওয়ান। নামটা মনে নেই। তবে আমাকে ধোকলা ভালভাবে খাওয়াতে হবে।’
রবিবার বোলপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, জিডিপি বৃদ্ধির হারে ৩২ রাজ্যের মধ্যে ১৬ নম্বরে বাংলা। এদিন মুখ্যমন্ত্রী তার জবাব বলেন, ২০১৯–২০ অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হরে সারা দেশে ২ নম্বরে বাংলা। অমিত শাহর দাবি, শিল্পের বিকাশে ৩২ রাজ্যের মধ্যে ২০ নম্বরে। মমতার জবাব, বাংলা এ ক্ষেত্রে ৪ নম্বরে। আর তা কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যই বলছে।
অমিত শাহ বলে গিয়েছেন, রাজ্যের ৫৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে শৌচাগার নেই, ১০ শতাংশ প্রাথমিক স্কুলে এখনও বিদ্যুৎই পৌঁছয়নি। এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে মমতা এদিন জানান, ১০০ শতাংশ স্কুলে শৌচাগার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। ৯৯ শতাংশ স্কুলে রয়েছে বিদ্যুৎ। অমিত শাহকে নিশানা করে মমতা এদিন কটাক্ষ করেন, ‘আমাদের স্কুলগুলির শৌচাগার একদিন ব্যবহার করবেন নাকি? দরকার পড়লে স্যানিটাইজ করে দেব।’
রাজ্যে ৯০ শতাংশ প্রাথমিক স্কুলে ডেস্ক নেই, ৩০ শতাংশ স্কুলে উপযুক্ত শ্রেণিকক্ষ নেই বলে অভিযোগ করেছিলেন অমিত শাহ। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ৯৩ শতাংশ স্কুলে প্রয়োজনীয় আসবাব রয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলে অমিত শাহ অভিযোগ করেছিলেন, সরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যার নিরিখে ৩২ রাজ্যের মধ্যে ২৩ নম্বরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তার জবাবে এদিন মমতা জানিয়েছেন, ‘তৃণমূলের শাসনকালে প্রায় ২৭ হাজার বেড বেড়েছে। গত ১০ বছরে সাড়ে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছে।’
এই সব তথ্য, পরিসংখ্যান দেওয়ার পরই এদিন মমতা মজা করে বলেন, ‘সব উত্তর দিয়ে দিয়েছি। এর জন্য কিন্তু অমিত শাহকে আমাকে খাওয়াতে হবে। আমি গুজরাটি খাবার খেতে চাই। ধোকলা আমার খুব প্রিয়।’ উল্লেখ্য, ১২ জানুয়ারি ফের রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেদিন তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য ধোকলা আনেন কিনা এবার সেটাই দেখার!