হাজারো নির্দেশ, বিতর্ক সত্ত্বেও রাজ্যের রেফার রোগের ছবিটা এতটুকু যে বদলায়নি, তা ফের প্রমাণিত হল সোমবার। তার জেরে মৃত্যু হল বছর ২৬-এর এক যুবকের। পরিবারের অভিযোগ, কলকাতার তিন সরকারি হাসপাতালে ভরতি নেওয়া হয়নি।
দিন ১৪ আগে দক্ষিণ বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের বাসিন্দা অশোক রুইদাসকে। পরিবারের দাবি, তাঁর টাইফয়েড ধরা পড়েছিল। সঙ্গে হালকা শ্বাসকষ্ট ছিল। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। এরইমধ্যে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সোমবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরিবারের অভিযোগ, সেখানে অশোককে ভরতি নেওয়া হয়নি এবং শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও ভরতি না নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ মৃতের পরিবারের।
পরে কোনওক্রমে অ্যাম্বুলেন্সে জোগাড় করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় বলে অভিযোগ। তারইমধ্যে স্ট্রেচারেই মৃত্যু হয় অশোকের।
ছেলের দেহের পাশে বসে হাহাকার করতে করতে জগদীশ রুইদাসকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার ছেলেটার করোনা হয়নি। টাইফয়েড হয়েছিল। চিকিৎসকদের পায়ে ধরলাম একটু গ্যাস (অক্সিজেন) দিন। আমার ভালো ছেলেটা মরে গেল। কেউ ভরতি নিল না। স্ট্রেচারেই মরে গেল।’ পরে কলকাতা মেডিক্যালেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তারপর পুলিশ এলেও পরিবারের তরফে দেহ ছাড়া হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে তিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। রাজ্য সরকারের তরফে অবশ্য কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হাসপাতালে এলে রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা করতে হবে। রোগী ফেরানো যাবে না। কিন্তু শনিবারের পর সোমবার রেফার রোগে কলকাতায় আরও এক মৃত্যুর ঘটনায় আবারও প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিল, তাহলে নির্দেশ কি সার? বাস্তরে তার ফল মিলবে না?
উত্তরটা জানা নেই। সেই উত্তরটা মিলতে মিলতে হয়তো একইভাবে আরও এক পরিবারের কোল খালি হবে।