একদিকে তাপস চট্টোপাধ্যায় অন্যদিকে তাপস রায়। এই দুই তাপসের আক্রমণে বেশ অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসে। তাপস চট্টোপাধ্যায়ের আক্রমণ দলের বিরুদ্ধে। বিজয়া সম্মিলনীতে ডাক না পাওয়ার ক্ষোভ। আর তাপস রায়ের আক্রমণ সরাসরি লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। আর আগের মন্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই সমালোচনার ধারা অব্যাহত রাখলেন বরানগরের বিধায়ক তাপস রায়।
ঠিক কী বলেছেন তাপস রায়? দু’দিন আগেই উত্তর কলকাতার বিজেপি সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষের বাড়িতে সুদীপের যাওয়া নিয়ে চাঁচাছোলা ভাষায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তাপসবাবু। আর এই অস্বস্তি ঠেকাতে তড়িঘড়ি বুধবার তাপস রায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কিন্তু তারপরও ঠেকানো গেল না অস্বস্তি। আজ, বৃহস্পতিবার তাপসবাবু বলেন, ‘ধুর! ধুর! সত্যি কথা বলতে আমি ডরাই নাকি। নরেন্দ্র মোদীর থেকে ছিট কাপড় নিয়েও তো ও পদ বাঁচাতে পারল না। ওম বিড়লাকে তেল দিয়েও হল না। এবার প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিপ্লব দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ আদায় করুক দেখি।’
দু’দিন আগে কী বলেছিলেন তাপসবাবু? সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি নেতার বাড়িতে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে তাপস রায় সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘দলের উচিত যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দলের কাছে আনুগত্য দেখিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আস্থা রাখা। দলে এমন অনেক লোক রয়েছেন যাঁরা দলনেত্রীকে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছেন। সঙ্গে বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি হয়েছেন তমোঘ্ন ঘোষ। তাঁর ও তাঁর পিতার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই কথা সকলেরই জানা। এবার দুর্গাপুজোয় তমোঘ্ন ঘোষের বাড়িতে আমন্ত্রিত ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী এবং কল্যাণ চৌবে। প্রত্যেকেই পুজোর একদিন সেখানে গিয়েছিলেন।’
ছিট কাপড় নিয়ে আক্রমণের হেতু কী? চলতি বছরের লোকসভার অধিবেশনে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কোটের প্রশংসা করেছিলেন। তারপরই প্রধানমন্ত্রী তাঁর মতো একটি জহর কোটের ছিট কিনে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠিয়ে দেন। সেটা বানিয়ে পরেন সুদীপ। তবে সুদীপও দুটো ছিট কিনে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠান। আর এই নিয়েই সুদীপকে তুলোধনা করেছেন তাপস রায়। তিনি বলেন, ‘কারও কোট দেখে এরকম হ্যাংলামো করলে যে কেউ কাপড় কিনে পাঠিয়ে দেবে। শুনেছি ও নাকি দুটো ছিট কাপড় কিনে আবার মোদীকে দিয়েছে। কিন্তু আমার মৌলিক প্রশ্ন হল, এখানে যখন কেন্দ্রের সরকার এত দমনপীড়ন করছে, রাজ্যের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ করছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে পর্যন্ত কোলে বাচ্চা নিয়ে ইডি অফিসে যেতে হচ্ছে, তখন কি এই সব আদিখ্যেতা মানায়? লোকসভায় খাদ্য ও গণবন্টন সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ তৃণমূল কংগ্রেসের ছিল। আমার প্রশ্ন হল, এত আদিখ্যেতা করেও সেই পদ কেন বাঁচাতে পারলেন না লোকসভায় দলের নেতা? কদিন আগে লোকসভার স্পিকারকে প্রশংসায় ভরিয়ে টুইট করেছিলেন। বলেছিলেন, সংসদীয় কমিটিতে নাকি ভাল কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও পদ ধরে রাখতে পারলেন না কেন? দলের জন্য যাঁদের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস নেই, তাঁরা আবার কী বলবেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন, কারা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। কারা দলনেত্রীকে না জানিয়ে বিজয় গোয়েল, প্রমোদ মহাজনদের ম্যানেজ করে মন্ত্রী হওয়ার জন্য স্যুট পরে বসেছিলেন।’