আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল বিভাগের ছাত্র শাকিল আহমেদকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার গ্রেফতার হয়েছেন ছাপাখানার উচ্চপদ প্রতীন খাঁড়া। প্রতীন তাঁর শ্বশুরবাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। পুলিশ সেখানে তল্লাশি করতে গিয়ে দেখে একটি বিছানা বেশ উঁচু। সন্দেহ হওয়ায় সেই বিছানা ওঠাতে বলে পুলিশ। এরপৎই প্রতীনকে সেখান থেকে উদ্ধার করে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্তকে বারাসত আদালতে তোলা হলে ছ’দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
জানা গিয়েছে, জেরায় প্রতীন জানিয়েছেন, ঘটনার দিন নিউ টাউনের ইকো আর্বান ভিলেজে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে প্রতীন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালিয়ে ট্যাংরায় নিজের ফ্ল্যাটে যাচ্ছিলেন। প্রতীন দাবি করেছেন, ওই ছাত্র আচমকা তাঁর গাড়ির সামনে চলে এসে ধাক্কা খান। তিনিও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গার্ডরেলে ধাক্কা মারেন। এরপর সেখান থেকে তিনি চলে যান। দুর্ঘটনার পরে প্রতীন ট্যাংরার ফ্ল্যাট ছেড়ে বিরাটিতে শ্বশুরবাড়িতে এসে উঠেছিলেন প্রতীন। শেষে সেখান থেকেই গ্রেফতার হন তিনি।
এর আগে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পথ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন নিউটাউনে। তাঁদের অভিযোগ, দুর্ঘটনায় জড়িত গাড়িটি চালাচ্ছিলেন কোনও প্রভাবশালী। যদিও জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত প্রতীনের গাড়িটি একটি সংবাদপত্রের নামে রেজিস্টার্ড। দুর্ঘটনার সময় গাড়ির সংস্থার স্টিকার খসে পড়েছিল। সেই স্টিকারের সূত্র ধরেই বিভিন্ন সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে সেই গাড়ির খোঁজ করেছিল পুলিশ। কসবার সার্ভিস সেন্টার থেকে উদ্ধার করা হয় ঘাতক গাড়িটিকে। আনন্দপুরের সার্ভিস সেন্টারে যখন গাড়িটির খোঁজ করতে যাওয়া হয়, ঠিক তখনই প্রতীনের চালক সেই গাড়িটি নিয়ে সেখানে পৌঁছে ছিলেন। ফরেনসিক টিম গিয়ে গাড়িটি পরীক্ষা করে। অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা অর্থাৎ ৩০৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রতীনের নামে।
ঘটনার পর কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, যতই প্রভাবশালী হোক আলিয়ার ছাত্র মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হবেই। তবে এর আগে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে নানান অভিযোগ উঠেছিল প্রতিবাদী ছাত্রদের তরফে। ঘাতক গাড়ির অভিযুক্ত চালককে গ্রেফতার করার দাবিতে রবিবার বিকেল থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিউটাউনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আলিয়ার পড়ুয়ারা। তবে টেকনো সিটি থানার পুলিশ প্রতীনের খোঁজে জোরদার তল্লাশি জারি রেখেছিল। অবশেষে বিরাটিতে তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রতীনকে। প্রতীন খাঁড়া নাকি বক্স খাটের ভিতর লুকিয়েছিলেন। ধৃত ছাপাখানার উচ্চপদস্থ আধিকারিক নির্দিষ্ট কোনও উদ্দেশ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে জেরা জারি রেখেছে পুলিশ।