চিড়িয়াখানা নাকি ব্রিগেডের ভিড়? বড়দিনে চিড়িয়াখানার দিকে তাকালে অনেকের মনেই এদিন এই প্রশ্নটাই উঁকি দিয়েছিল। একেবারে গিজগিজ করছে লোকের মাথা। একে ররিবার। তার উপর আবার বড়দিন। বঙ্গবাসী যেন হুমড়ি খেয়ে পড়লেন চিড়িয়াখানায়। বাচ্চা, পরিবার পরিজন নিয়ে এদিন সব রাস্তা যেন মিশেছিল আলিপুরের চি়ড়িয়াখানায়। আগে থেকেই সম্ভাবনা ছিল এবার অন্তত এক লাখ মানুষ আসতে পারেন চিড়িয়াখানায়। এদিন ভিড় সেই দিকে এগোতে থাকে ক্রমশ। তবে সর্বশেষ তথ্য বলছে এদিন চিড়িয়াখানায় ৮৭, ৩৭৩জন এসেছিলেন। অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টার খুলেও ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খেলেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।
তবে এদিন ভিড়ের নিরিখে চিড়িয়াখানাকে ছাপিয়ে গেল ইকো পার্ক। সর্বশেষ তথ্য় বলছে এদিন ইকো পার্কে ৯১, ১৩৬জন এসেছিলেন। ভিড়ের মিটারে তৃতীয় স্থানে সায়েন্স সিটি। সেখানে গিয়েছিলেন ২২,৫০০জন।
তবে এর সঙ্গেই প্রশ্ন উঠে গেল, এই যে এত গিজগিজে ভিড় তার জেরে চিড়িয়াখানার জন্তুদের উপর কতটা প্রভাব পড়ে? এনিয়ে ইতিমধ্যেই পশুপ্রেমীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। সবথেকে বড় প্রশ্ন উঠছে চিড়িয়াখানার ভেতরে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে। বহু মানুষ খাবার নিয়ে চিড়িয়াখানার ভেতরে ঢোকেন। আর তারপর চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গনেই বসে দর্শনার্থীদের খাওয়ার আসর। সেখানে প্লাস্টিকের প্য়াকেট, থার্মোকলের থালাও ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ। এমনকী যাওয়ার সময় সেসব চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গনেই ফেলে রেখে দেন তারা। কার্যত যাবতীয় বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চিড়িয়াখানার ভেতরে পরিবেশকে বিঘ্ন ঘটানো হয় বলে অভিযোগ। এখানেই প্রশ্ন উঠছে বন্য পরিবেশ থেকে বন্যপ্রাণদের নিয়ে এসে খাঁচায় রাখার ব্যবস্থা করা হয় চিড়িয়াখানায়। কিন্তু সেই চিড়িয়াখানায় যেভাবে হইহুল্লোড় হয় তাতে কি বন্য প্রাণীদের পরিবেশের বিঘ্ন ঘটে না?
এনিয়ে আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, খাবারের ব্যাপারে কড়াকড়ি করা সেভাবে সম্ভব নয়। ফুড কোর্টের মতো বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এটা চলতেই থাকবে।
এদিকে চিড়িয়াখানার ভেতর প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এনিয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু নজর এড়িয়ে অনেকেই প্লাস্টিক ফেলে রেখে যান। পাশাপাশি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, কর্মী সংকটের জেরে সব দিক সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা থেকেই যায়।
এর সঙ্গেই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, চিড়িয়াখানার প্রাণীরা সারাবছরই লোকজন দেখে। তবে বিশেষ কিছু দিনে ভিড় হয়। তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রাণীদের মধ্য়ে স্ট্রেস পড়তে পারে। তবে এই স্ট্রেস কাটানোর কোনও উপায় জানা নেই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে। কারণ ভিড় এড়ানোর কোনও পথ জানা নেই চিড়়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছেও।
তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন পশু প্রেমিকরা। চিড়িয়াখানায় চিৎকার হই হুল্লোড় কমানো, প্লাস্টিকের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমানোর দাবি তুলেছেন তারা। এর সঙ্গেই বছর শেষে ও নতুন বছরের প্রথম দিনে ফের ভিড় হতে পারে চিড়িয়াখানায়।