রাজ্য সরকার আগেই বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছিল। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের টাকা নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কিন্তু নানা অভিযোগ তুলে এই প্রকল্পেও কেন্দ্রীয় সরকার টাকা আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ। আর তার জেরে তৈরি হয়েছে অর্থ সংকট। ফলে পরিষেবা ধাক্কা খাচ্ছে। আর তাই মা ও শিশুদের পরিষেবায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রসূতি ও শিশুদের বাড়ি থেকে হাসপাতাল যাতায়াত করার জন্য নির্ধারিত রাজ্যের ১৯৬৯টি অ্যাম্বুল্যান্সের বকেয়ার পরিমাণ জমে প্রায় ৩০ কোটি টাকাতে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ।
এদিকে বকেয়া একটা সমস্যা তো বটেই। আর অপরদিকে পরিষেবা না পেয়ে ক্ষতি হওয়া মারাত্মক ব্যাপার। এমনই ঘটনা সামনে আসছে। বহু অ্যাম্বুলেস গাড়ি চালাতে না পেরে মালিকরা সেগুলি বসিয়ে দিচ্ছেন। কারণ একটাই অর্থ। তাও আবার বকেয়া। নানা জেলায় বকেয়া টাকার দাবিতে অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার জেরে একাধিক প্রসূতি অথবা তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ। একাধিক জেলায় বাড়িতে সন্তান প্রসবের অন্যতম কারণ হল, সময়মতো নিশ্চয়যান বা অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়া। ২০২২–২০২৩ সালে বাংলায় মোট মাতৃ–মৃত্যু হয়েছে ৮৪২টি। ২০২২–২৩ সালে রাজ্যে ১১ হাজার ৮০০ শিশু বাড়িতে জন্মেছে।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সঠিক সময়ে অ্যাম্বুলেন্স বা নিশ্চয়যান না মেলায় দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের ভালুকাদাতে এক অন্তঃসত্ত্বার গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো যায়নি। ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ পঞ্চায়েতের দেউচি এলাকায় একই ঘটনা ঘটায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে টোটোতেই সন্তান প্রসব করেন এক মহিলা। একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর আলিপুরদুয়ার বীরপাড়ায় পরিষেবা না পেয়ে পথেই সন্তান প্রসব করেন মহিলা। ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি অ্যাম্বুলেন্সের মালিকরা বকেয়া টাকার দাবিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে পরিষেবা বন্ধ করে দেন। তার সমস্যায় পড়েন প্রসূতিরা বলে খবর।
আরও পড়ুন: বাবার মৃত্যুতে ছেলের নামে ইস্যু হল ডেথ সার্টিফিকেট, তোলপাড় মেদিনীপুর হাসপাতাল
এই বিষয়টি নিয়ে এবার নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের টাকা কিছুতেই আসছে না। বরং রাজ্যকেই বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে। অল বেঙ্গল নিশ্চয়যান অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটার্স ইউনিয়নের সভাপতি গোপালচন্দ্র গড়াই বলেন, ‘বকেয়া নিয়ে তো আর টানা সম্ভব হচ্ছে না। বকেয়ার ২০ শতাংশ, কখনও ২৫ শতাংশ টাকা দিচ্ছে সরকার। এখন বকেয়া জমে ৩০ কোটি পার হয়েছে। জ্বালানির দাম মাত্রা ছাড়িয়েছে। আমাদের রেট বাড়ানো হয়নি। গাড়ি চলবে কী করে?’ এই অ্যাম্বুলেন্সের টাকা স্বাস্থ্য মিশন থেকে আসে। এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর বক্তব্য, ‘টাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সমস্যা অচিরেই মিটে যাবে।’