মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের পর ভারত বিশ্বের তৃতীয় দেশ যারা শত্রুর মাটিতে ঢুকে তাকে খতম করার ক্ষমতা রাখে। সার্জিক্যাল স্ট্রাই করে তা প্রমাণ দিয়েছে ভারত। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দৃঢ়তা ও বাহিনীর দক্ষতার জোরেই তা সম্ভব হয়েছে। রবিবার কলকাতায় NSG-র নতুন ভবনের উদ্বোধনে এসে এমনটাই বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু একথা বলে আসলে কী বোঝাতে চাইলেন তিনি?
২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোট ও মুজফ্ফরাবাদে জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ভারতী বায়ুসেনা। উরি হমালার পর এই হামলায় অস্বস্তিতে পড়ে পাকিস্তান। হামলায় অন্তত ৭০ জন পাক জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে ভারত। পরের বছর ২০১৮ সালের জুনে সেই হামলার ভিডিয়ো ফুটেজও প্রকাশ করে সেনা।
এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোরগোল পড়ে। ভারতের পাশে দাঁড়ায় একের পর এক ক্ষমতাশালী দেশ। এমনকী ইসলামিক বিশ্বেরও সমর্থন পায়নি পাকিস্তান। এই ঘটনায় বাহিনীর প্রত্যয় বেড়েছে বলে দাবি করে সরকার। পালটা অভিযানের প্রমাণ চেয়ে সরব হয় তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের একাংশ। অভিযান নিয়ে রাজনীতি করারও অভিযোগ করে তারা।
শাহের দাবি, এই অভিযানের হাত ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের সমকক্ষ হয়ে উঠেছে ভারত। ইতিহাস বলছে, শত্রুর ঘরে ঢুকে হানা দেওয়ায় এই দুই দেশের কোনও জুড়ি নেই। কী করে শত্রুর ঘরে ঢুকে তাকে মেরে ছারখার করতে হয় তার বারবার নজির রেখেছে তারা। ১৯৭৬ সালে এয়ার ফ্রান্সের অপহরণ হওয়া বিমান উগান্ডার এন্টেবেতে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। এন্টেবে বিমানবন্দরে কম্যান্ডো অভিযান চালিয়ে পণবন্দি যাত্রীদের উদ্ধার করে এনেছিল ইজরায়েলি বাহিনী। প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার বিমানে করে গিয়ে অভিযান চালিয়েছিল তারা। অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। অভিযানে শহিদ হয়েছিলেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ভাই জোনাথন নেতানিয়াহু।
এর আগে ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিক্সে ইজরায়েলি ক্রীড়াবিদদের ওপর হামলা চালায় ফিলিস্তিনি জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল একজন জার্মান পুলিশকর্মী-সহ ১৭ জনের। এর পর ১ দশক ধরে এই হামলায় জড়িতদের খুঁজে খুঁজে তাদের দেশে গিয়ে হত্যা করে মোসাদ।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে একই রকম ভাবে ৯-১১ হামলার পর আফগানিস্তানে তালিবানের ঘাঁটিতে হামলা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ১ দশকের লড়াই শেষে পাকিস্তানে খতম করে ওই হামলার মূলচক্রী ওসামা বিন লাদেনকে।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের সঙ্গে একাসনে বসেছে বলে দাবি অমিত শাহের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগ্রাসী দেশ হিসাবে কখনোই পরিচিত ছিল ভারত। বুদ্ধের ক্ষমাপ্রবণতার নীতি অনুসরণ করে এই দেশ। সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের মতো আগ্রাসন ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।