সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই গ্রামবাংলায় শাসক–বিরোধী সব শিবিরই জেলাগুলিতে নেমে পড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের হাতিয়ার উন্নয়ন আর বিরোধীদের হাতিয়ার দুর্নীতি। সেখানে দেখা যাচ্ছে গ্রামীণ সমবায় সমিতির নির্বাচনগুলিতে গোহারা হতে শুরু করেছে বিজেপি। গ্রামীণ বাংলার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি সমবায়। স্বশাসিত সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলির মাধ্যমে সারা বছর ধরে চাষিদের ঋণ দেওয়ার কাজ হয়। এবার তাতেও সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে।
ঠিক কী অভিযোগ উঠেছে? সূত্রের খবর, সমবায় সমিতিগুলির আয়–ব্যয়ের বিস্তারিত হিসেব এবং অডিট রিপোর্ট চেয়ে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে অমিত শাহের সমবায় মন্ত্রক। সুতরাং পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই এমন পদক্ষেপ করা হল। সম্প্রতি সমবায় সমিতি এবং ব্যাঙ্ক নিয়ে বিরোধী দলনেতা নয়াদিল্লিতে নালিশ ঠুকেছেন। তার প্রেক্ষিতেই এই চিঠি এসেছে নবান্নে। একে পঞ্চায়েত দফতরের মাধ্যমে চলা ১০০ দিনের কাজ, আবাস প্রকল্পের টাকা বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। তার উপর সমবায়ের কাজে হস্তক্ষেপ কি গ্রাম বাংলার অর্থনীতিকে পঙ্গু করার ছক? উঠছে প্রশ্ন।
ঠিক কী মনে করছেন সমবায় মন্ত্রী? কেন্দ্র থেকে চিঠি এলেও বিষয়টিকে পাত্তা দিতে রাজি নন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। তাঁর দাবি, বাংলায় সমবায়ের যাবতীয় কাজকর্মে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়। তাই হাজার চেষ্টা করলেও নরেন্দ্র মোদী–অমিত শাহদের পক্ষে এই ক্ষেত্রে রাজ্যকে চাপে ফেলা কোনওভাবেই সম্ভব হবে না। বাংলায় সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। গ্রামীণ এলাকা উন্নয়ন এবং কৃষিকাজ সচল রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে সমিতিগুলি। এই চিঠি পাওয়ার পরই গ্রামীণ এলাকার মানুষের স্বার্থ রক্ষার্থে পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার।
আর কী জানা যাচ্ছে? নবান্ন সূত্রে খবর, ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেই রাজ্যের সমবায় ব্যবস্থার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকবছর আগেও বাংলার প্রায় ৭১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও ব্যাঙ্কের পরিষেবা ছিল না। রাজ্যজুড়ে ২,৬৩১টি কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। চলতি অর্থবর্ষে সমবায় ক্ষেত্রে বাজেট বাড়িয়ে ৫৭২ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘গ্রামীণ অর্থনীতিকে একটি নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক লক্ষ পরিবারকে পশুপালন ক্ষেত্রে স্বনির্ভর করতে ১৮০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি। কিষান ক্রেডিট কার্ড, মৎস্যজীবী ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাও নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই এখানে সুবিধা করতে পারবেন না মোদী–শাহরা।’