গত কয়েকদিন ধরেই স্বাস্থ্য়ভবনের সামনের ছবিটা একেবারে বদলে গিয়েছে। অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন চিকিৎসকরা। জুনিয়র চিকিৎসকরা। দিন যায়- রাত যায়। ঠায় বসে রয়েছেন তাঁরা। স্লোগান উঠছে আমার দিদির বিচার চাই। কারোর কাছে তিনি দিদি। কারোর কাছে তিনি বোন। কারোর কাছে তিনি কন্যা। আরজি করের সেমিনার রুমে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল সেই তরুণী চিকিৎসককে।
বিচার চান জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই সঙ্গেই স্বাস্থ্যভবনের নানা গাফিলতি দূর করতে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় বসে রয়েছেন তাঁরা। আর রাস্তায় বসে থাকা সেই জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়ালেন অগণিত সাধারণ মানুষ। ফ্লাস্কে করে চা ভরে বিরাটির গৃহবধূ ভোর ভোর চলে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে। রাত জাগা মানুষগুলোকে একটু চা খাওয়াতে হবে। কেউ আবার মিষ্টি নিয়ে আসছেন। কেউ নিয়ে এসেছেন জলের বোতল। ডাক্তারবাবুরা যেন অভুক্ত না থাকেন। বলছেন জীবন্ত ভগবানদের পায়ে নিবেদন করতে এসেছি।
এমন ছবি শেষ কবে দেখেছে বাংলা তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। তবে এভাবে অরাজনৈতিক কোনও আন্দোলনের পাশে যে বাংলার একেবারে সাধারণ মানুষ থাকতে পারেন তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
সংবাদমাধ্যমে যে সমস্ত ছবি আসছে তার বাইরেও রয়েছে অনেক অনেক ছবি। সেই ছবিতে রয়েছে পাশে থাকার অঙ্গীকার। আন্দোলনকে সর্বোতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার।
তেমনই ছবি দেখা গেল স্বাস্থ্যভবনের সামনে। এক্স হ্যান্ডেলে সেই ছবি পোস্ট করেছেন একজন ব্যক্তি। তিনি লিখেছেন, ‘দক্ষিণ বারাসত থেকে উনি নিজের চাষের শসা নিয়ে এসেছেন মাথায় করে। বললেন 'আমার ভাই বোনেরা এই রাস্তায় বসে আছে। ওদের জন্য এটুকু করতে পারব না?'
ভরসা বাড়াচ্ছে মানুষ, মনুষ্যত্ব এবং মানুষ তোমারে সেলাম'।
প্রচারের আলোতে তাঁরা নেই। তবু যে যেটুকু পারছেন নিয়ে আসছেন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে। জমিতে শসা হয়েছে। সেটাই তিনি বস্তা করে নিয়ে এসেছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য। কতটা আন্তরিক কতটা মানবিক, কতটা এই আন্দোলনের প্রতি সহযোগিতা থাকলে তারপর এই ভাবে জমির শসা নিয়ে আসা যায় সেটা সহজেই বোঝা যায়।
'আমার ভাই বোনেরা এই রাস্তায় বসে আছে। ওদের জন্য এটুকু করতে পারব না?' এই আন্তরিকতা শেষ কবে দেখেছে বাংলা? এই মানবিকতা শেষ কবে দেখেছে বাংলা?