তিনি পথকুকুরদের শুধুমাত্র ভালোবাসা বা আদরে ভরিয়ে রাখেন না। সেইসঙ্গে, রোজ প্রায় আড়াশো পথকুকুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন, পথের সারমেয়রা অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসা পর্যন্ত করান। পুরোটাই করেন স্বেচ্ছায় এবং নিজের খরচে। অথচ, অবলাদের প্রতি তাঁর এই প্রেমেই ভারী আপত্তি প্রতিবেশীদের একাংশের। সেই আক্রোশের জেরেই কুকুরপ্রেমী ওই মহিলাকে চরম হেনস্থা করলে একদল 'উন্মত্ত' লোক!
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আক্রান্ত ওই মহিলার নাম বেণু আঠা। মধ্যবয়সী বেণু থাকেন কলকাতা লাগোয়া বিধাননগরে। অন্যান্য দিনের মতো শনিবার রাতেও পথকুকুরদের খাবার খাওয়াতে বেরিয়েছিলেন তিনি।
অভিযোগ, সেই সময়েই সল্টলেক ইসি ব্লক কেন্দ্রীয় সরকারি আবাসনের বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসেন জনা পঁচিশেক বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে অল্প বয়সী যুবক থেকে শুরু করে বয়স্ক পুরুষ - সকলেই ছিলেন। তাঁরা বেণুর পথ আগলে দাঁড়ান এবং তাঁকে জানান, এভাবে পথকুকুরদের খাওয়ানো চলবে না।
খুব স্বাভাবিকভাবেই বেণু এই বাধা মানেননি। উলটে তিনি এর প্রতিবাদ করেন। অভিযোগ, এরপরই শুরু হয় মারধর। অভিযুক্তরা বেণুর স্কুটার ফেলে দেয়, সেটি ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। তাঁর মোবাইলটিও রাস্তায় আছাড় মেরে ফেলা হয়। ফলে সেটির স্ক্রিন ফেটে যায়।
এই ঘটনা দেখে কাছেই উপস্থিত কয়েকজন যুবক ও কয়েকজন প্রবীণ দৌড়ে আসেন বেণুকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু, হামলাকারীরা আগে থেকেই সঙ্গে করে লোহার রড, বাঁশ, ইট এনেছিলেন বলে অভিযোগ। যাঁরা বেণুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন, এইসব 'অস্ত্র' দিয়েই তাঁদেরও মারধর করা হয়। পাশাপাশি, হামলাকারীরা বেশ কয়েকটি পথকুকুরকেও পেটান বলে অভিযোগ।
এই ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বেণু। তাঁর বক্তব্য, পথকুকুরদের খাওয়ানো কি এত বড় 'অপরাধ', যে তাঁকে এভাবে হেনস্থা করা হল, মারধর করা হল? যদিও এই প্রথম নয়, বেণুর দাবি, এর আগে এই হামলাকারীরাই বেণুর ছেলেকে হেলমেট দিয়ে মেরেছিলেন। সেই ঘটনা ঘটেছিল কিছু দিন আগে। আর, এবার তাঁর উপরেও হামলা চালানো হল।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বেণু। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, কুকুরপ্রেমীদের উপর এমন হামলা নতুন কিছু নয়। এমন বহু মানুষই আছেন, যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে পথকুকুকদের সেবা করেন। আবার, উলটো দিকে একদল মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এসব দেখলেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন।
এমনকী, পথকুকুরদের অকারণ মারধর করা, পথকুকুরের শাবকদের খুন করার মতো এমন সব ঘটনা ঘটেছে এই শহর তথা রাজ্যে, যা মানুষের মনুষ্যত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেয়।