গত ২৬ ডিসেম্বর পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে ইডি। নিয়ম অনুযায়ী এ দিন সশরীরে আদালতে হাজিরা দেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ এবং চার্জশিটে নাম থাকা অন্যেরা। সেখানেই মুখোমুখি হন 'অপা' - অর্পিতা মুখাপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সংবাদ প্রতিদিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেদিন আদালত কক্ষে তাঁদের দেখা হয়। তবে তাঁরা কথা বলেননি। যদিও পার্থ নাকি অর্পিতার দিকে তাঁকিয়েছিলেন। তবে অর্পিতা ছিলেন উদাসীন। (আরও পড়ুন: '১৫০ গ্রাম'? বীর্যই তো মেলেনি… আরজি কর কাণ্ডের নেপথ্যে এক জনই? সামনে নয়া রিপোর্ট)
আরও পড়ুন: 'খুনের ষড়যন্ত্র', ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির 'ফাঁকে' ফেরানো যাবে না হাসিনাকে?
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সম্প্রতি আদালতে পঞ্চম চার্জশিট পেশ করে ইডি। তাতে তারা জানিয়েছে, বেনামে ফ্ল্যাট বুক করে কালো টাকা সাদা করতেন পার্থ। ইডির তরফে জানানো হয়েছে, তদন্তে উঠে এসেছে এভাবে কালো টাকা সাদা করতে ইমপ্রোলাইন কনস্ট্রাকশনস প্রাইভেট লিমিটেড এবং এইচআরআই ওয়েল্থ ক্রিয়েশন রিয়েলটর্স প্রাইভেট লিমিটেড নামে ২টি সংস্থা খুলেছিলেন পার্থ। রাজীব দে, সুরঞ্জিতা জানা ও স্ত্রী বাবলি চট্টোপাধ্যায়কে এই ২ সংস্থার ডিরেক্টর পদে নিয়োগ করেছিলেন পার্থ। রাজীব ও সুরঞ্জিতার নামে কলকাতার বিভিন্ন নামি ডেভেলপারের কাছে ফ্ল্যাট বুক করতেন পার্থ। ২ সংস্থার মাধ্যমে লেনদেন হত টাকা। এব্যাপারে অম্বুজা - নেওটিয়া সংস্থার কর্ণধার হর্ষবর্ধন নেওটিয়াকেও জেরা করেছিলেন গোয়েন্দারা। তিনিও একথা স্বীকার করেছেন। (আরও পড়ুন: 'একাধিক ব্যক্তির মিশ্র DNA...', আরজি কর কাণ্ডে সামনে আরও এক CFSL রিপোর্ট)
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এর আগে জামিন পেয়ে গিয়েছেন 'ঘনিষ্ঠ বন্ধু' অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তবে এখনও জেলেই দিন কাটছে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জামিন দেওয়া হবে। এই মামলায় জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে সব গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের বয়ান নেওয়ার চেষ্টা করবে ট্রায়াল কোর্ট। সেই সময় ট্রায়াল কোর্টের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে পার্থকে। এই আবহে যদি ১ ফেব্রুয়ারির আগে চার্জ গঠন এবং সাক্ষীদের বয়ান গ্রহণ হয়ে যায়, তবে আগেই জামিন পেতে পারেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিকে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সিবিআইয়ের মামলায় এখনও জামিন পাননি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারাধীন বর্তমানে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৩ জুলাই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থকে গ্রেফতার করে ইডি। গ্রেফতার করা হয় তাঁর বান্ধবী অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। প্রথমে টালিগঞ্জে অর্পিতার ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে ২১ কোটি টাকারও বেশি নগদ উদ্ধার করেছিল ইডি। এরপরে অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকেও টাকা উদ্ধার করা হয়। পাওয়া যায় ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এত নগদ দেখে চোখ কপালে উঠেছিল বঙ্গবাসীর। তবে এখানেই শেষ হয়নি দুর্নীতির টাকার হিসেব।
এদিকে পার্থ, অর্পিতার পরও এই শিক্ষক নিয়োগ দুর্তীতি মামলায় রাজ্যের আরও হেভিওয়েটরা কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের জালে জড়িয়েছেন। মানিক ভট্টাচার্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, প্রাক্তন এসএসসি উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা, এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সচিব অশোক সাহা, প্রাক্তন তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষ সহ একাধিক জন এই মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে হাজতে যান। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জামিন পেলেও পার্থ এখনও জেলে।