বেআইনি নির্মাণের উপর দাঁড়িয়ে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাগান। মাসছয়েক আগে ডায়মন্ড সিটি সাউথ আবাসন পরিদর্শনের সময় সেই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল দমকল বিভাগ। তাতে কোনও লাভ হয়নি। ভাঙা হয়নি বেআইনি নির্মাণ। দমকলের সেই চিঠি হাতে এল হিন্দুস্তান টাইমসের।
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) দুর্নীতি মামলায় গত ২৩ জুলাই টালিগঞ্জ এলাকার ডায়মন্ড সিটি সাউথ আবাসনে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের 'ঘনিষ্ঠ সহযোগী' অর্পিতার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে নগদ ২১.৯ কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ওই আবাসনের টাওয়ার টু'র ওয়ান-এ ফ্ল্যাট থেকে ৭০ লাখ টাকা মূল্যের গয়না এবং ৫৪ লাখ টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছিল। অভিযানের সময় অর্পিতার ফ্ল্যাটের একটি খোলা বাগানও নজরে এসেছিল ইডি আধিকারিকদের।
সেই বাগানের তথ্য এবার সামনে এসেছে। হিন্দুস্তান টাইমসের হাতে আসা চিঠি অনুযায়ী, চলতি বছর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পরিদর্শনের পর গত ১৫ মার্চ ডায়মন্ড সিটি সাউথ রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে তা পাঠানো হয়েছিল। তাতে দমকল বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেলের কার্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছিল, যে ছাউনির উপর অর্পিতার বাগান আছে, তা আদতে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় ফাঁকা জায়গা (কোনওভাবে আগুন লাগলে উদ্ধারকাজ, দমকলের গাড়ি চলাচলের মতো কাজের জন্য সাধারণত সেই জায়গা রাখা হয়) অবরুদ্ধ করে দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছিল, 'এই চিঠি জারির ছ'মাসের মধ্যে আশ্রয়স্থানের নিচে (ফাঁকা জায়গা) গড়ে তোলা গাড়ির ছাউনি ভেঙে ফেলতে হবে।'
আরও পড়ুন: Arpita Mukherjee: জেলের রুটি খাবার মতো নয়, আইনজীবীদের কাছে অভিযোগ অর্পিতার
ডায়মন্ড সিটি সাউথ আবাসনের বাসিন্দাদের দাবি, ডায়মন্ড গ্রুপের তরফে সেই গাড়ির ছাউনি তৈরি করা হয়েছিল। যা পরবর্তীতে আবাসনের মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। নাম গোপন রাখার শর্তে ডায়মন্ড সিটি সাউথ রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য বলেছেন, 'যখন ডায়মন্ড গ্রুপের তরফে রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের হাতে আবাসনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল, তখন গাড়ির ছাউনি ছিল। আমরা এখন দোটানায় পড়েছি। অন্যান্য গাড়ির ছাউনি অস্থায়ী কাঠামোর উপর নির্মাণ করা হলেও অর্পিতার মুখোপাধ্যায়ের বাগানটি ঢালাই করা একটি স্থায়ী কাঠামোর উপর গড়ে তোলা হয়েছে।' সেইসঙ্গে তিনি দাবি করছেন, কোনও গাড়ির ছাউনিতে গাড়ি রাখতেন না অর্পিতা। আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজে গাড়ি রাখতেন পার্থের 'ঘনিষ্ঠ সহযোগী'।
যদিও ডায়মন্ড গ্রুপের দাবি, বছরদশেক আগে আবাসন তৈরি করা হয়েছিল, তখন কোনওরকম বেআইনি কাঠামো খাড়া করা হয়নি। ডায়মন্ড গ্রুপের মালিক অমরনাথ শ্রফ হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, 'আমরা অনুমোদিত প্ল্যানের বাইরে গিয়ে কোনও কাজ করিনি। কয়েক বছর আগে আইনি পথেই ডায়মন্ড সিটি সাউথ রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের হাতে (আবাসনের) রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল।'
বেআইনি কাঠামো নিয়ে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু দাবি করেছেন, ডায়মন্ড গ্রুপের তরফে রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তা দেখেননি তিনি। তবে আবাসনের বাসিন্দারা চাইলে দমকলের ডিরেক্টর জেনারেলের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তিনি বলেন, 'আমি বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। কারণ আমি সেই নির্দেশ দেখিনি। আমি যতদূর জানি, তাতে বাসিন্দারা কখনও ফাঁকা জায়গা নিয়ে অভিযোগ করেননি। তাঁরা (দমকলের) ডিরেক্টর জেনারেলের সঙ্গে দেখা করতে পারেন এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।'
উল্লেখ্য, ২৩ জুলাই অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে ২১.৯ কোটি টাকা উদ্ধারের পরদিনই পার্থের 'ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে' গ্রেফতার করে ইডি। ২৩ জুলাই পার্থকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২৭.৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে সোনা এবং একাধিক মূল্যবান সামগ্রী উদ্ধার করে ইডি। সপ্তাহদুয়েক ইডির হেফাজতে থাকার পর আপাতত অর্পিতা এবং পার্থ দু'জনেই জেলে আছেন।