রাজ্য–রাজ্যপাল সঙ্ঘাত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে বুধবার। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে ‘সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন’ করার অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণের দাবিতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
রাজ্যের শাসকদলের এই পদক্ষেপের পাল্টাও দিয়েছেন ধনখড়। তিনি এদিন দাবি করেছেন যে এই রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, এটা নিশ্চিত করাই তাঁর কর্তব্য।
লাগাতার সাংবিধানিক নির্দেশিকা অমান্য করায় সংবিধানের ১৫৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে তাঁর সম্মতি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি রাষ্ট্রপতিকে পাঠিয়েছে তৃণমূল সাংসদদের একটি দল। সেই স্মারকলিপি রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে গ্রহণ করা হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়।
বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসে রাজ্যপাল হিসেবে এই রাজ্যে আসার পর থেকেই নিয়মিত টুইট করে বা সাংবাদিক সম্মেলন করে বা কখনও টিভি–র অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ তুলে এসেছেন তিনি। রাজ্য সরকারের কাজকর্মের বিরুদ্ধেও আঙুল তুলেছেন রাজ্যপাল। কখনও সরকারি আধিকারিক, কখনও মন্ত্রী, এমনকী মুখ্যমন্ত্রী ও বিধানসভার অধ্যক্ষকেও আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপেই তিনি তাঁর সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করেছেন।’
এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী যুদ্ধে জড়িত ধনখড়ও এদিন পাল্টা আক্রমণ করেছেন। তিনি এদিন বলেছেন, ‘মানুষ নির্ভয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবে তা নিশ্চিত করা তাঁর দায়িত্ব।’ বেহালা শখের বাজারে মা চণ্ডীর মন্দিরে এদিন সস্ত্রীক পুজো দিতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। পুজো শেষে সেখানেই তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘নির্ভয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এই রাজ্যে অনুষ্ঠিত হয় না।’
রাজ্যপাল এদিন জানিয়েছেন, জনগণ কাকে ভোট দেয় সে ব্যাপারে তাঁর কোনও আগ্রহ নেই। তবে তাঁরা কোনও ভয়–ভীতি ছাড়াই তাঁদের ভোটাধিকার যাতে প্রয়োগ করতে পারে তা নিশ্চিত করা তাঁর দায়িত্ব। আগামী বছর এপ্রিল–মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে হবে বিধানসভা নির্বাচন। রাজ্যপাল এদিন পুলিশ–প্রশাসনকে নির্বাচনের সময় নিরপক্ষে ভূমিকা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারেই এদিন রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘তিনি আরও বলেছেন যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা তাঁর দায়িত্ব। কিন্তু তিনি কে? এটা তো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এর পাশাপাশি বেঙ্গল বিজনেস সামিটের খরচের হিসেব চেয়েছেন রাজ্যপাল। কিন্তু সেই অধিকারও তো তাঁর নেই। রাজ্য সরকারের সংগঠিত ইভেন্টগুলির ব্যয়ের ব্যাপারে জানার অধিকার রয়েচে শুধুমাত্র সিএজি–র।
যদিও বিজেপি–র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মতে, ‘রাজ্য সরকারের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যপাল তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন।’ রাজ্যপালকে অপসারণের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজ্যপালকে অপসারণের জন্য তৃণমূল যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার কোনও প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। একজনের রাজ্যপালের কী ভূমিকা বা দায়িত্ব সে ব্যাপারে আমাদের রাষ্ট্রপতি অবগত রয়েছেন।’