স্বাস্থ্য ভালো নেই কলকাতার বালিগঞ্জ এলাকার বাতাসের! এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে সাম্প্রতিক কিছু পর্যবেক্ষণে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, কলকাতায় যে সাতটি বায়ুর গুণমান নির্ণয়কারী কেন্দ্র রয়েছে, তার মধ্যে বালিগঞ্জ এলাকার কেন্দ্রটির হাতে আসে তথ্যাবলী সবথেকে উদ্বেগের।
সেই তথ্য অনুসারে, গতবছর সারা কলকাতার মধ্যে বালিগঞ্জেই বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতি ছিল সবথেকে বেশি। যা মূলত পেট্রল ও ডিজেলচালিত বিভিন্ন যানবাহনের টেল পাইপ থেকে নির্গত হয়। গ্রিনপিস-এর তরফ থেকে প্রকাশ করা একটি রিপোর্টে এই তথ্য সামনে এসেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-এর মানদণ্ড অনুসারে, যে কোনও এলাকায় বাতাসে মিশ্রিত নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ১০ গ্রাম/এম কিউব হিসাবে থাকলে তা বসবাসের উপযোগী।
সংশ্লিষ্ট সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, কলকাতা শহরে সামগ্রিকভাবে ৮০ শতাংশ দিনগুলিতেই বাতাসে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ হু-এর এই নির্ধারিত মানদণ্ডের মধ্যে থাকছে। কিন্তু, বাকি দিনগুলিতে সেই পরিমাণ বা মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে।
যার ফলে সামগ্রিকভাবে যখন বার্ষিক হিসাব করা হচ্ছে, তখন শহরের বাতাসে গড় নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে হচ্ছে - ২৮ গ্রাম/এম কিউব। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে ভারতের জাতীয় মানদণ্ড হল - ৪০ গ্রাম/এম কিউব।
গ্রিনপিস-এর তরফে প্রকাশিত ওই রিপোর্টের নাম দেওয়া হয়েছে - 'বেয়ন্ড নর্থ ইন্ডিয়া: নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড পলিউশন অ্যান্ড হেল্থ রিস্কস ইন সেভেন মেজর ইন্ডিয়ান সিটিজ'।
তাদের পেশ করা এই সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, যে সাতটি শহরে এ নিয়ে তথ্যতলাশ করা হয়েছে, তার মধ্যে দূষণের নিরিখে কলকাতার স্থান হল - তৃতীয়।
তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্রের পুণে। সেখানকার বাতাসে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডজনিত দূষণের পরিমাণ ৩৭ গ্রাম/এম কিউব। বাতাসে ৩৬ গ্রাম/এম কিউব নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড মিশ্রিত অবস্থায় থাকার ফলে তালিকায় দু'নম্বর স্থানে রয়েছে রাজস্থানের জয়পুর শহর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত গ্যাস। যা মূলত যানবাহনের মাধ্যমেই নির্গত হয়। ফলত, যেকোনও শহরাঞ্চলে এই গ্যাসের বাড়বাড়ন্ত থাকে।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, কোনও এলাকায় যদি দীর্ঘদিন ধরে বাতাসে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে সেই এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা নানা ধরনের গুরুতর অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন।
তাঁদের মধ্যে যেসমস্ত ব্যাধিগুলি দেখতে পাওয়া যেতে পারে, সেগুলি হল - ফুসফুসের সংক্রমণ। যার জেরে ফুসফুস নষ্ট পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
বাসিন্দাদের শরীরে নানা ধরনের অ্যালার্জি বাড়তে পারে। শ্বাসজনিত বিভিন্ন অসুখ বাড়তে পারে এবং তার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এমনকী, শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তের সংবহনের মাধ্যমে অসুখ ছড়ানোর প্রবণতা বাড়তে পারে। বাড়তে পারে হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত নানা ধরনের ব্যধি।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড শরীরের ভিতর প্রবেশ করলে সবথেকে বেশি ক্ষতি হতে পারে বাচ্চাদের।
২০১৯ সালের একটি গবেষণা ও সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, শহর কলকাতায় ২০১৫ সালে অন্তত ৩,২১০টি এমন ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে শুধুমাত্র নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড-জনিত দূষণের কারণেই কোনও না কোনও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।