এই জীবন রেখে আর লাভ নেই। এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন এক যুবক। তাই নিজের জীবনকে শেষ করে দিতে বেছে নিয়েছিলেন জলপথকে। মেট্রো পথে যাননি তিনি। কারণ তিনি চাননি মেট্রো পথে জীবন শেষ করতে। তাঁর জন্য যেন মানুষের অসুবিধা নয় হয়। তাই জলপথেই জীবন শেষ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। চলন্ত লঞ্চ থেকে একেবারে মাঝ গঙ্গায় ঝাঁপ দেন ওই যুবক। আত্মহত্যা করতেই যে এই ঝাঁপ তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি লঞ্চের কর্মীর। তাই তিনিও ওই যুবকের প্রাণ বাঁচাতে ওয়াটার টিউব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন গঙ্গায়। আর নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করে আনলেন ডুবন্ত যুবককে।
তারপর ওই যুবক প্রশ্ন করেন লঞ্চের কর্মীকে। কেন তাঁর জীবন বাঁচালেন তিনি? এই জীবন তো সে রাখতেই চায়নি। এসব কথা শুনে লঞ্চের কর্মী বুঝতে পারেন ওই যুবক মানসিক অবসাদে ভুগছেন। কিন্তু ওই যুবকের প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি ওই লঞ্চের কর্মী। শুক্রবার এমন ঘটনা ঘটেছে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির বাগবাজার থেকে হাওড়ামুখী এমভি জলভোর লঞ্চে। দু’দিন আগে হাওড়া ফেরিঘাটে লঞ্চ থেকে নামার সময়ে জেটির ফাঁক দিয়ে গলে গঙ্গায় তলিয়ে যান এক প্রৌঢ়া। কদিন পরে তাঁর দেহ ভেসে ওঠে কলকাতায়। সেদিন ওই প্রৌঢ়াকে লঞ্চ কর্মীরা বাঁচাতে পারেননি। এবার আর সেই ভুল হয়নি।
আরও পড়ুন: ‘অরাজনীতির কর্মসূচি নিয়ে সিপিএম অফিসে বৈঠক’, ময়দানের সভাকে তোপ কুণালের
হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থা সূত্রে খবর, এমনটা যে হবে তা তাঁরা কেউ বুঝতেই পারেননি। তবে ওই যুবককে দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছিল। তাই একটু খেয়াল রাখা হচ্ছিল। কিন্তু দুপুরে হঠাৎই লঞ্চ থেকে মাঝ গঙ্গায় ঝাঁপ দেন বর্ধমানের বাসিন্দা ওই যুবক। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। মাঝ গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার আগে পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে এসেছেন বলে জানিয়েছিলেন। হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতে বাগবাজার থেকে লঞ্চে ওঠেন। লঞ্চ যখন মাঝ গঙ্গায় তখন ঝাঁপ দেন ওই যুবক। এই ঘটনা দেখে লঞ্চের বাকি যাত্রীরা চিৎকার করে ওঠেন। লঞ্চ কর্মী কমল মজুমদার এই দৃশ্য দেখে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন। আর ওই যুবককে লঞ্চে তুলে নেন।
এই রুদ্ধশ্বাস ঘটনার পর সবাই একেবারে চুপচাপ। পুলিশ থেকে শুরু করে জলপথের কর্তারা এসে হাজির হন। এই ঘটনা নিয়ে হুগলি নদী জলপথের ডিরেক্টর অজয় দে বলেন, ‘যুবককে উদ্ধারের পরে তিনি জানান, একাধিক লোকের থেকে তিনি অনেক টাকা পান। কিন্তু কেউ সেই টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। তাই মানসিক অবসাদে ভুগছেন তিনি। আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়ে পরিবারের কাছে মুখ দেখাতে পারছিলেন না। তাই জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন চিকিৎসায় সুস্থ করে যুবককে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কর্মীর এই কাজ প্রশংসনীয়।’