বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম হত্যাকাণ্ডে নয়া মোড়। কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে এই সাংসদকে নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে হল। তবে হত্যাকারী ধরা পড়েছে। চলছে দফায় দফায় জেরা। আর তাতেই ধৃত কসাই জিহাদ মারাত্মক সব তথ্য দিয়েছে পুলিশের কাছে বলে সূত্রের খবর। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় ধৃত আনোয়ারুলের দেহ ৮০ টুকরো করে নিউটাউন, ভাঙড় এলাকার নানা জায়গায় ফেলেছে বলে স্বীকার করেছে। আর এই কাজের বিনিময়ে ৫০০০ টাকাও পেয়েছে। যেহেতু জলাশয়ে ফেলা হয়েছে সেহেতু দেহের সব অংশ উদ্ধার করা কঠিন এমনটাই মনে করছেন পুলিশ অফিসাররা। কারণ জলে থাকা জীবজন্তু তা খেয়ে ফেলবে।
এদিকে তদন্তকারীদের নজরে এসেছেন বাংলাদেশের বাসিন্দা সিলেস্টি রহমান নামে এক যুবতী। পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের দিন সম্ভবত সিলেস্টাই বাংলাদেশের সাংসদকে নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই সিলেস্টাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে ঢাকা পুলিশ। গত ১২ মে কলকাতায় চিকিৎসা করানোর জন্য আসেন ঝিনাইদহের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম। ১৩ তারিখ নিউটাউনের ফ্ল্যাটে খুন হন সাংসদ। দু’দিন নিখোঁজ থাকার পর সাংসদের হত্যা পুলিশের সামনে আসে। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে সিআইডি। হত্যায় জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশ থেকে তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। ১৮ মে সাংসদের খোঁজ মিলছে না বলে পুলিশে অভিযোগ জানান গোপাল বিশ্বাস। তদন্তে নেমে নৃশংস হত্যাকাণ্ড জানতে পারে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ভোটকেন্দ্রে গজরাজ ঢুকে পড়ার আশঙ্কায় নিরাপত্তার তোড়জোড় শুরু, তটস্থ বন দফতর
অন্যদিকে বনগাঁ থেকে গ্রেফতার হয় জিহাদ ও সিয়াম। জিহাদ কসাই। বাংলাদেশের বাসিন্দা হলেও মুম্বইতে কাজ করত। সাংসদকে খুন করার জন্য এদের সুপারি দেওয়া হয়েছিল। তাই মুম্বই থেকে কলকাতায় এসেছিল বলে জেরায় তারা স্বীকার করেছে। খুন করার পর বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ পালানোর ছক কষেছিল তারা। কিন্তু ধরা পড়ে গিয়েছে। খুনের পর সাংসদের দেহ ৮০ টুকরো করে ভাঙড়ের জলাশয়ে ফেলা হয়েছে বলেও স্বীকার করেছে ধৃত। তাই বৃহস্পতিবার রাত থেকে লাগাতার জলাশয় তল্লাশি চলছে। এখনও কিছু উদ্ধার হয়নি। নিউটাউনের অভিজাত আবাসনের ফ্ল্যাটে প্রথমে ক্লোরোফর্ম দিয়ে সংজ্ঞাহীন করা এবং পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভারী বস্তু দিয়ে সাংসদের মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। তার পর রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে দেহ লোপাটের কাজ শুরু হয় বলে জেরায় উঠে এসেছে।
এছাড়া অবৈধভাবে খুলনার বাসিন্দা পেশায় কসাই জিহাদকে কলকাতায় নিয়ে এসে চিনার পার্কের কাছে একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয়। নিউটাউনের ওই আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজে খুনের দিন এক যুবতীর সঙ্গে আবাসনে ঢুকতে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের সাংসদকে। ওই যুবতীই সম্ভবত সিলেস্টা রহমান বলে অনুমান তদন্তকারীদের। তদন্তে উঠে এসেছে, এই খুনের মাস্টারমাইন্ড সম্ভবত আখতারউজ্জামান নামে বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত আমেরিকা অথবা লন্ডন থাকা এক ব্যক্তি। যাঁর সঙ্গে সাংসদের পরিচয় ছিল। আর ওই যুবতীও আখতারের পরিচিত। খুনের পর হাড়, মাংস পৃথক করে হলুদ মাখিয়ে দেহের টুকরোগুলি নানা জায়গার জলাশয়ে ফেলা হয়। তবে এখানে আরও একটি নাম উঠে আসছে। ২০০ কোটি টাকার বখরা নিয়ে সাংসদের সঙ্গে শাহিনের ঝামেলা। আগে সাংসদকে খুনের হুমকি দিয়েছিল শাহিন। আর এই খুনের মাস্টারমাইন্ড সে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।