চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে হিন্দু মহিলার মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামনে এল নয়া এক তথ্য। দাবি করা হচ্ছে, নৃশংস ভাবে হত্যা হওয়া সেই প্রৌঢ়ার ছেলে সনাতন জাগরণ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক। রিপোর্ট অনুযায়ী, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে সম্প্রতি নাকি খাগড়াছড়িতে মিছিল করেছিল হিন্দুরা। সেই মিছিলের পর থেকেই প্রান্তকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাঁকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও নাকি একের পর পোস্ট করেছিল মৌলবাদীরা। (আরও পড়ুন: 'পায়খানা পরিষ্কার করায় কৃতিত্ব…', ৪ দিনে কলকাতা দখলের 'হুংকারের' জবাব তথাগতর)
আরও পড়ুন: ভারতকে অস্থিতিশীল করতে চায় USA, অভিযোগ করে BJP, জবাবে মার্কিন দূতাবাস বলল...
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে চুমকি রানি দাস নামক এক মহিলা খুন হন সম্প্রতি। তাঁর ছেলে প্রান্ত দাসের থেকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন প্রতিবেশী যুবক মহম্মদ রাসেল। বছর ২০-র রাসেল পেশায় একজন অটো চালক। রাসেল নাকি প্রান্তকে ধারের টাকা ফিরিয়ে দেয়নি। উলটে বেশ কয়েকজন মিলে প্রান্তর মা চুমকিকে খুন করেছে বলে অভিযোগ। পুলিশ সেই ঘটনার তদন্তে নেমেছে। প্রাথমিক ভাবে সন্দেহের তির রয়েছে রাসেলের দিকেই। রিপোর্টে জানা গিয়েছে, চুমকি রানি দাসের বাড়িতে ঢুকে দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। চুমকিদেবীকে খুনের পর আততায়ীরা তাঁর গায়ে থাকা গয়নাও চুরি করে নেয়। জানা যায়, চুমকি দাসের কানের দুল থেকে শুরু করে গলায় থাকা নেকলেস, সবই চুরি করেছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ এখন এই দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ মনে করছে, ধারের টাকা ফেরাতে না পেরে এই কুকর্মের ছক কষেছিল রাসেল। (আরও পড়ুন: দামাস্কাস দখলের পথে বিদ্রোহীরা, সিরিয়ার রাজধানী ছাড়লেন আসাদ)
এদিকে এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন এপার বাংলর বিজেপি নেতারা। এই ঘটনার একটি খবর পোস্ট করেছেন রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। সঙ্গে শুধু লিখেছেন - 'বাংলাদেশ'। সঙ্গে হাতজোড়ের একটি ইমোজি। এদিকে বিজেপি যুব মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ শাখার মুখপাত্র অচিন্ত্য মণ্ডল চুমকি রানির ঘরের ভিডিয়ো পোস্ট (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) করে লেখেন, 'খাগড়াছড়ি জেলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সমন্বয়ক প্রান্ত দাসকে না পেয়ে তার মা'কে হত্যা করেছে জিহাদিরা। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে প্রতিবাদ মিছিলের পর থেকেই ফেসবুকে জিহাদিরা প্রান্ত দাসকে কয়েকবার হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।'
উল্লেখ্য, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছে। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সারজিস আলম চট্টগ্রামে ইসকন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সম্প্রতি। এই আবহে ভারতের রাস্তাতেও লোক নেমেছে। বাংলাদেশি মৌলবাদে বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে এখানে। ভারত সরকারও একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। সেই খুনের ঘটনায় ৮ হিন্দুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে অভিযোগ উঠছে, ইচ্ছে করে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে কোনও আইনজীবী যাতে মামলা না লড়েন, তার জন্যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।