তিরঙ্গার অবমাননার প্রতিবাদে আগেই কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের একাংশ বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা করবেন না বলে ঘোষণা করেছিলেন। একাধিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের তরফেও এমন ঘোষণা সামনে এসেছিল। কোনও কোনও চিকিৎসক আবার শর্তসাপেক্ষে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
আর, এখন জানা যাচ্ছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বহু বাংলাদেশি রোগীও, যাঁদের কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে এসে চিকিৎসা করানোর বা অস্ত্রোপচার করানোর কথা ছিল, তাঁরা নিজেরাই সেই অ্যাপোয়েন্টমেন্ট হয় বাতিল করে দিচ্ছেন, আর তা না হলে পিছিয়ে দিচ্ছেন। আবার কখনও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তেমনটা করতে বাধ্য হচ্ছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ এই সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেই অনুসারে - আসলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার পরিকল্পনাই বাতিল করে দিচ্ছেন ওইসব রোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। ফলত, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টও বাতিল করতে বা পিছিয়ে দিতে হচ্ছে।
হাসপাতালগুলি সূত্রে খবর, বহু বাংলাদেশি রোগীই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেখানে এসে ভর্তি হচ্ছেন না।
কলকাতার পেয়ারলেস হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার থেকে এখনও পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি অস্ত্রোপচার বাতিল করতে হয়েছে তাদের। কারণ, সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি রোগীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাসপাতালে এসে ভর্তিই হননি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা পাঁচজন রোগীর তরফ থেকে কোনও সাড়া পায়নি। তাতে অনুমান করা হচ্ছে, তাঁরা হয়তো ভারতে পৌঁছতেই পারেননি।
এছাড়াও, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত আরও ১৫ জন বাংলাদেশি রোগীর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে কলকাতার ওই হাসপাতালে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, তাঁরাও শেষ পর্যন্ত আর ভর্তি হবেন না।
হাসপাতালের তরফে আরও জানানো হয়েছে, তাদের অনলাইন পরিষেবা প্রদানের ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশি নাগরিকরা যেটা বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ - এই ব্যবস্থাপনায় তাঁরা অনলাইনেই তাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ পেতে পারেন। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত এই হাসপাতালে অন্তত কোনও বাংলাদেশি নাগরিক সেই ব্যবস্থা ব্যবহার করেননি।
ডিসান হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, গত একমাসের মধ্যে তাদের বাংলাদেশি রোগীর পরিমাণ কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। অন্তত ৫০ শতাংশ বাংলাদেশি রোগী ভারতে পৌঁছতে না পেরে অনলাইনে তাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ নিয়েছেন। অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাসপাতালে এসে ভর্তি হতে পারেননি। ফলত, তাঁদের অস্ত্রোপচার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বি পি পোদ্দার হাসপাতালের ছবিটাও প্রায় এক। প্রায় ৫০টি অস্ত্রোপচার তাদের পিছিয়ে দিতে হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশি রোগীরা ভারতে আসতে পারেননি।
হাসপাতাল সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রতিবছরের মতো এবারও ডিসেম্বর মাসের শেষ ১০-১১ দিনের মধ্যে বহু বাংলাদেশি রোগীর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৫০ জনের অস্ত্রোপচারের তারিখ পিছিয়ে দিতে হয়েছে।
মণিপাল হাসপাতালেও গত কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি পরিমাণে কমেছে। ফলত, শীঘ্রই তাদেরও অস্ত্রোপচার বাতিল করতে বা পিছিয়ে দিতে হতে পারে।