ভুয়ো সোয়্যাব রিপোর্টের ফাঁদে পড়ে মারা গেলেন কলকাতার এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। পরে সরকারি হাসপাতালে তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গেলেও বাঁচানো যায়নি ৫৭ বছরের ব্যাঙ্ক কর্তাকে। মৃতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার তিন জনকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক দিন জ্বর ও কাশিতে ভোগার পরে পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন পেশায় ব্যাঙ্ক চাকুরে বিমল সিনহা। প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়া বিমলবাবুর রক্ত পরীক্ষার জন্য সেই চিকিৎসক পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন যাঁর একটি প্যাথোলজিকাল পরীক্ষাগার রয়েছে। গত ২৫ জুলাই সেই ব্যক্তি বিমলবাবুর বাড়ি এসে তাঁর সোয়্যাব নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। পরে ফোনে জানানো হয়, রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
রোগীর পরিবার তাতে সন্তুষ্ট না হলে পরীক্ষাগার মালিকের ভাই তাঁদের একটি হাতে লেখা রিপোর্ট দেন এবং হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে করোনা নেগেটিভ হওয়ার কথা জানান।
এম আর বাঙুর হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, রিপোর্টটি জাল। তাঁর কথায়, ‘সোয়্যাব রিপোর্টটির সঙ্গে একটি হাতে লেখা ৯ সংখ্যার স্পেসিমেন রেফারাল ফর্ম আইডি দেওয়া হয়েছিল। আসল রিপোর্ট টাইপ করা হয় এবং তাতে ১৩ সংখ্যার আইডি দেওয়া থাকে। ওই রিপোর্টটি ভুয়ো।’
এর পর তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে বিমলবাবুকে প্রথমে একটি নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ধরা পড়ে জাল রিপোর্টের বিষয়টি। অনেক চেষ্টা করে এর পর বিমলবাবুকে বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকরা। গত ৩০ জুলাই বাঙুর হাসপাতালে তিনি মারা যান।
ঘটনার জেরে নেতাজি নগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিমল সিনহার স্ত্রী। বিমলবাবুর ছেলে হর্ষ সিনহা জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য ২,০০০ টাকা নিয়েছিলেন ওই পরীক্ষাগারের মালিক।
তদন্তে নেমে মোবাইল নম্বর থেকে পাওয়া সূত্র ধরে অভিযুক্তদের সন্ধানে তল্লাশিতে নামেন নেতাজি নগর থানার ওসি সুভাষ অধিকারী। এর পর দক্ষিণ কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয় ইন্দ্রজিৎ সিকদার (২৬) ও বিশ্বজিৎ সিকদার (২৩) নামে দুই ভাইকে। তাঁরা দুটি স্বনামধন্য হাসপাতালে চুক্তিবদ্ধ প্রযুক্তি কর্মী হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। তৃতীয় অভিযুক্ত, প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষাগারের মালিক অনীত পায়রাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।