নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় আবারও দোষীকে ফাঁসি সাজা শোনাল আদালত। এবার, কলকাতার বড়তলা থানা এলাকার ফুটপাথ থেকে সাতমাসের শিশুকন্যাকে অপহরণ করে যৌন নিগ্রহ এবং তাকে খুনের চেষ্টার ঘটনায় দোষী যুবককে ফাঁসির সাজা শোনানো হল। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫), এই সাজা ঘোষণা করেছেন কলকাতার ব্য়াঙ্কশাল আদালতের বিশেষ পকসো কোর্টের বিচারক। সোমবারই (১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) ওই ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
ঘটনার ৮০ দিনের মাথায় দোষীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি নির্যাতিত শিশুটির পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলেছে আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনাকে 'বিরলের মধ্যে বিরলতম' বলে উল্লেখ করেছে আদালত। এর আগে সরকারি আইনজীবীও একই কথা জানিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ঘটনার পর যখন আরজি কর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাতমাসের ওই শিশুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন, তখন তিনি চমকে উঠেছিলেন।
ওই চিকিৎসক পুলিশকে জানিয়েছিলেন, শিশুটির উপর যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তা অকল্পনীয়। এই কারণেই ওই সরকারি চিকিৎসক এই ঘটনাকে 'বিরলের মধ্যে বিরলতম' বলে উল্লেখ করেছিলেন। মঙ্গলবার আদালতের তরফেও সেই একই পর্যবেক্ষণ করা হয়।
সাজাপ্রাপ্ত ওই যুবকের নাম রাজীব ঘোষ। ৩৪ বছরের ওই যুবক ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর এলাকার বাসিন্দা। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম থেকে রাজীবকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত বছরেরই ৩০ নভেম্বর কলকাতার বড়তলার ফুটবাসী এক দম্পতির সাতমাসের ওই শিশুকন্যাকে তার বাবা-মায়ের সাময়িক অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তুলে নিয়ে যায় রাজীব। তারপর শিশুটির উপর পৈশাচিক যৌন নির্যাতন চালায় সে। এবং কয়েক ঘণ্টা পর ফের ওই ফুটপাথেই তাকে ফেলে রেখে পালায়। ঘটনার তদন্তে নেমে এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটজ দেখে রাজীবকে চিহ্নিত করে পুলিশ।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেই শিশুটির উপর বিকৃত যৌন নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। একরত্তির যৌনাঙ্গে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল! পরবর্তীতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাচ্চাটির স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হলে, সেখানেও একই সিদ্ধান্তে উপনীত হন চিকিৎসকরা।
প্রসঙ্গত, এর আগে সম্প্রতি জয়নগর এবং ফরাক্কাতেও নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। তবে, সেই দু'টি ক্ষেত্রে নিগৃহীতারা ছিল বালিকা এবং কিশোরী। তাছাড়াও, তাদের ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল। সেই দু'টি ঘটনাতেও আদলত অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে খুনের সাজা দিয়েছিল। এবার বড়তলার ক্ষেত্রেও একইভাবে কঠোর অবস্থান নিল আদালত।
কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, আইনের কঠোর পদক্ষেপের পরও কেন এই ধরনের পৈশাচিক আচরণ ও ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ মনে করছে, এটা একটা ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যধি, যা ক্রমশ শিকড় গেঁড়ে বসছে। এই ধরনের সমস্যা সমূলে উৎপাটন করতে হলে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সামগ্রিক সামাজিক সংস্কারও প্রয়োজন বলে মনে করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।