বানতলা কাণ্ডে প্রথমে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হিসাবে তিনজন মৃত শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ। আর সব শেষে বানতলা চর্মনগরীতে নিকাশি নালা তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে গেল। তদন্তের স্বার্থে সাত সদস্যের কমিটি গড়ল কেএমডিএ। ওই কমিটিতে রয়েছে কলকাতা পুলিশের দুই অফিসার, পুর দফতরের দু’জন যুগ্ম সচিব এবং কেএমডিএ’র তিনজন সিনিয়র অফিসারকে রাখা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে পাঁচদিনের মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে হবে। আর এই ঘটনায় লালবাজারের পক্ষ থেকেও পৃথক তদন্ত করা হচ্ছে। ওই শ্রমিকদের কাজে নিয়োগকারী ঠিকাদারকে গতকালই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জেরে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স এলাকায় নয়া নিকাশি পথ তৈরির কাজ এখন বন্ধ করে দিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। আপাতত তা বন্ধ রাখা হল। কেএমডিএ সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্তের কথা সেক্টর ৬ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং এমএসএমই দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও জানানো হয়েছে, বানতলা চর্মনগরীর ট্যানারিগুলির রাসায়নিক মিশ্রিত তরল বর্জ্য রাস্তায় ফেলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সেসব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত উন্নয়নের কোনও কাজ হবে না।
আরও পড়ুন: মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে স্কুলে সচেতনতা প্রশিক্ষণ শিবির, বিজ্ঞপ্তিতে ৩১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে ধন্দ
অন্যদিকে এই কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে বলে সূত্রের খবর। যদিও কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে মেয়র সরাসরি সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাননি। শুধু ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘খুব অবহেলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে যা দেখেছি তাতে ওখানে কাজ করার মতো কোনও অবস্থাই ছিল না। আরও বেশি সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কেএমডিএ ঘটনার তদন্ত করছে। যে ইঞ্জিনিয়াররা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের কর্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বানতলা চর্মনগরীতে ১৩ কিমি নতুন নিকাশি নালা তৈরির কথা রয়েছে। তার মধ্যে ৭০ শতাংশ পাইপলাইন পাতা পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে। ম্যানহোল তৈরির কাজ চলছিল ধাপে ধাপে। রবিবার সেখানে তিনজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাই কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া নতুন নিকাশি পথে কেমন করে ট্যানারির তরল বর্জ্য ঢুকল সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই নতুন নিকাশি পথে ট্যানারির তরল বর্জ্য এসে ভয়ানক ক্ষতি করে দিচ্ছে। এই অবস্থায় সেখানে কোনও উন্নয়নের কাজ করা সম্ভব নয় বলে এবার জানিয়ে দিল কেএমডিএ। ফলে এখন বন্ধ থাকবে কাজ। দূষিত জলে নানা ধরনের বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হওয়ার কারণেই তিনজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনায় ঠিকাদার আলিমুদ্দিন শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে তাঁর স্ত্রী নবিয়া বিবির দাবি, ‘আমার স্বামীর কোনও দোষ করেনি। সে নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছে। কোম্পানির ওয়ার্ক অর্ডার মেনেই কাজ চলছিল। ম্যানহোলে নামতে বারবার নিষেধও করেছিল আমার স্বামী। কিন্তু স্বামীর অনুপস্থিতিতে শ্রমিকরা ম্যানহোলে কাজে নেমেছিলেন এবং দুর্ঘটনা ঘটে যায়।’