২৪ তারিখ যাদবপুর বিশ্ববদ্যালয়ে যে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, তা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এখবর শোনার পরেই রাজ্য সরকারকে একহাত নিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান জগদীপ ধনখড়।
ওই অনুষ্ঠানে কবি শঙ্খ ঘোষকে ডি.লিট দেওয়ার কথা ছিল। একই সঙ্গে ডিএসসি সম্মানিক ডিগ্রিও বিশিষ্টদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল ধনখড়ের। কিন্তু সেই অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল। ইতিমধ্যেই আচার্য হিসাবে তাঁর ক্ষমতার পরিধির ওপর ডানা ছেঁটেছে রাজ্য।
ছাত্রবিক্ষোভের সামনে পড়তে পারেন রাজ্যপাল, সেই কারণ দেখিয়ে এদিন অনুষ্ঠান মুলতুবি করার সিদ্ধান্ত নেয় যাদবপুরের একজিকিউটিভ কাউন্সিল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সংসদ বলে যে ছাত্ররা বিক্ষোভ করতে পারেন ও অনেকে হয়তো অনুষ্ঠান বয়কট করবেন রাজ্যপাল এলে।বিশিষ্টদের সামনে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তাদের এই সিদ্ধান্ত বলে জানায় কাউন্সিল। ঠিক করা হয় শুধু ছাত্রদের ডিগ্রি দেওয়া হবে।
এর প্রতিক্রিয়ায় প্রেস কনফারেন্সে ধনখড় বলেন যে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিস্থিতি দেখে তিনি উদ্বিগ্ন ও দুঃখিত। ধীরে ধীরে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে ও শিক্ষার ডিএনএ বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বর্তমান পড়ুয়া ও পরবর্তী প্রজন্মের কত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে রাজ্যের কোনও খেয়াল নেই বলেও তাঁর অভিযোগ।
বিভিন্ন বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাননি বলে এদিন জানান ধনখড়। তাঁরও ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে, এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, তিনি শিরদাঁড়াহীন, এটা যেন কেউ না ভাবে।এর আগে ১২ তারিখ মৌলানা আবুল কালাম আজাদ তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সমাবেশ বাতিল হয়। এরপর ১৭ তারিখ প্রেসিডেন্সির গভর্নিং বডির বৈঠক স্থগিত ছিল। এরপর এল যাদবপুরে সমাবর্তন স্থগিতের খবর। এই তিনের মধ্যে যোগসূত্র দেখছেন রাজ্যপাল। তাঁর মতে শিক্ষায় রাজনীতিকরণের ও সরকারি ক্ষমতা কায়েমের ইঙ্গিতবাহী এই ট্রেন্ড।
কার্যত ইমার্জেন্সি চলছে, এই অভিযোগ করে ধনখড় বলেন পঞ্চম অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার পর তিনি মুখ খুলছেন। কেন উপাচার্য কোনও বার্তা পাঠালে তা সরকারের কাছ থেকে ঘুরে তাঁর কাছে আসছে, সেই প্রশ্নও করেছেন তিনি।
তবে এই সবের জন্য রাজ্যপালকেই দুষছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, পড়ুয়ারা নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে রাজ্যপাল বিজেপির মুখপাত্রের মতো করায় ছাত্ররা অখুশি বলে তাঁর অভিমত।
অন্যদিকে যাদবপুরের কলা শাখার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ জানিয়েছেন যে রাজ্যপালের অধিকার আছে সমাবর্তনে আসার। একই সঙ্গে তাদের কালো পতাকা দেখানোর ও তাঁর থেকে সার্টিফিকেট নিতে অস্বীকার করার অধিকারও আছে বলে দাবি এসএফআই নেতার। তাঁর অভিযোগ যে এর আগে ক্যাম্পাসে যখন ঝামেলা হল, তখন এবিভিপির বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি ধনখড়। তাই তিনি এলে প্রতিবাদ হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রনেতা।
এদিন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় যাদবপুর সহ পাঁচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা বিশাল মিছিল করেন মধ্য কলকাতায়। বিজেপি প্রধান দফতরের উদ্দেশে এই মিছিল এগোয়। পুলিশ অবশ্য তাঁদের সামনে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।