বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের কার্যকারিতা নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের তোলা প্রশ্নের জবাব দিলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। রাজ্যপালকে তিনি জানিয়েছেন, বাণিজ্য সম্মেলন নিষ্ফলা বলে তিনি যে দাবি করেছেন তা ভিত্তিহীন। একই সঙ্গে অমিত মিত্রের দাবি, এই সম্মেলনের জেরে পশ্চিমবঙ্গের GDP বেড়েছে। তৈরি হয়েছে প্রচুর কর্মসংস্থান।
বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের খরচের খতিয়ান নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই সোচ্চার রাজ্যপাল। রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে সম্মেলনে খরচের হিসাব চেয়েছেন তিনি। রাজ্যপালের দাবি, এই সম্মেলন আয়োজনে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। অথচ সম্মেলন থেকে কোনও লাভ হয়নি রাজ্যবাসীর। এই সম্মলনের জেরে রাজ্যে কত টাকার বিনিয়োগ হয়েছে ও তাতে কত কর্মসংস্থান হয়েছে, রাজ্য সরকারের কাছে তার হিসাবও চেয়ে পাঠান রাজ্যপাল।
জবাবি চিঠি অমিত মিত্র বলেন, ‘আমরা ২০১১ সালে দায়িত্ব নিয়েছি। তখন সরকারের ওপর অস্বাভাবিক করের বোঝা ছিল। অর্থনীতিতে ডামাডোল চলছিল। তার পরও রাজ্যে অভূতপূর্ব হারে মূলধন বৃদ্ধি হয়েছে।’
তিনি লিখেছেন, ‘কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা অর্থনীতির হাল ফেরাতে সক্ষম হয়েছি। রাজ্যে ছোট, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে একের পর এক বিনিয়োগ এসেছে। যার ফলে সরকারি রাজস্ব ও কর্মসংস্থানও বেড়েছে।’
এই পরিস্থিতিতেই বাণিজ্য সম্মেলন শুরু করার ভাবনা আসে রাজ্য সরকারের। যা রাজ্যে বিনিয়োগে শিল্পোদ্যোগীদের আশাবাদী করে তুলবে। একই সঙ্গে শিল্পপতিদের নানা সমস্যার সমাধানও খোঁজা যাবে সম্মেলনে। এছাড়া এতে সরকার যে বিনিয়োগ আনতে তৎপর তাও প্রতিষ্ঠিত হবে শিল্পপতিদের সামনে। যাতে কর্মসংস্থান বাড়বে।‘
প্রধানমন্ত্রীর উক্তি মনে করিয়ে অমিত মিত্র লিখেছেন, যে সব রাজ্য শিল্প সম্মেলন আয়োজন করে তাদের বাহবা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্য সম্মেলন তার উদ্ভাবনী বৈশিষ্টের জন্য দেশ ও বিদেশে বাহবা কুড়িয়েছে।
অমিত মিত্র জানিয়েছেন ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে ১২,৩২,৬০৩ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। ২০১৫ – ২০১৮ সালের মধ্যে যে প্রস্তাব এসেছে তার ৫০.২৭ শতাংশ কার্যকর হওয়ার পথে এগোচ্ছে। ২০১৯ সালের সম্মেলনের আসা প্রস্তাবের মধ্যে ৭১,৬৪৬ কোটি টাকার প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার পথে। রাজ্য সরকারের আর্থিক নীতি ও বাণিজ্য সম্মেলনের যৌথ অবদানের ফলে ২০১০ – ১১ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গে GDP-র পরিমান ৪.৬ লক্ষ কোটি থেকে ২০১৯ – ২০ সালে ১২.৫ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে।
একই ভাবে বেড়েছে রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণও। ২০১০ – ১১ সালে ২১,২২৮ কোটি থেকে তা বেড়ে হয়েছে ৬৫,৮০৬ কোটি।
বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে সরকারের সাফল্যের দাবি নিয়ে বরাবর প্রশ্ন তুলে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলগুলি। তাদের দাবি, বাণিজ্য সম্মেলন থেকে তেমন কোনও বিনিয়োগ আসেনি পশ্চিমবঙ্গে। এই নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছে তারা।