বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বহু রাজনীতিবিদ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় এই নিয়ে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছেন। আবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বারংবার হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে ঢাকাকে। এরই মাঝে এবার ফের একবার বাংলাদেশ নিয়ে মুখ খুললেন নওশাদ সিদ্দিকি। এর আগেও একবার বাংলাদেশ ইস্যুতে মুখ খুলে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ। আর এবার তিনি কাজে করে প্রমাণ করলেন যে তিনি এবং তাঁর দল বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গতকাল বাংলাদেশ ইস্যুতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নওশাদ সিদ্দিকি বললেন, 'আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র। তার প্রভাব আমাদের এখানেও আসছে। ঘটনাচক্রে আমাদের ভাষাও এক। বাংলা। তাই আমাদের কোথাও একটা আবেগ কাজ করছে। যেটা বাংলাদেশে হচ্ছে, কোনওভাবেই কাঙ্খিত নয়।' এরপর এই নিয়ে দলের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দু'দিন আগে এখানকার যিনি বাংলাদেশের হাই কমিশনের যিনি ডেপুটি কমিশনার রয়েছেন, তাঁর মাধ্যমে সেখানকার অন্তবর্তী সরকারের কাছে আমার আবেদন জানিয়েছিলাম। আজকে, আমাদের পক্ষ থেকে ডেপুটি কমিশনারের কাছে গিয়ে বলা হয়েছে, যে কোনও মূল্যে হিংসা বন্ধ করা হোক। আবেগের জায়গা থেকেই আমি বলব, দ্রুত বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসুক।' উল্লেখ্য, গতকাল আইএসএফ মিছিল করে বেকবাগানে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে যেতে চেয়েছিল। সেখানে পুলিশ তাদের মিছিল আটকে দিয়েছিল। সেই আবহে আইএসএফ কর্মী সমর্থকরা সেখানেই বসে পড়েছিলেন।
অপদিকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বিস্ফোরক মন্তব্য করেন গতকাল। তাঁর কথায়, 'বাড়াবাড়ি হচ্ছে।' এরই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনাকে সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেন। বাংলাদেশ নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী বলেন, 'বাড়াবাড়ি হচ্ছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের বিজেপি নিয়ে আসছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বসে রয়েছেন হিন্দুরা। থানার বড় বাবু, বিচারপতি, এসপি, ডিএম, কত হিন্দু। এগুলো দেখা যায় না? মাদ্রাসার ছেলেরা মন্দির পাহারা দিয়ে পুজো করার সুযোগ করে দিয়েছে। এগুলো দেখতে পান না? পালটা হামলা যারা করছে, তারা অস্থির মস্তিষ্কের। বাংলাদেশে কোথায় কি ঘটেছে, প্রকৃতপক্ষ কতটা... অত্যাচার হলে নিশ্চিত ভাবে তার নিন্দা করতে হবে। তবে সেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।'
এরপর সিদ্দিকুল্লা আরও বলেন, 'এখানে যখন বাবরি মসজিদের বিষয়ে বাংলাদেশ মুখ খুলেছিল, তখন মোদীজি বলেছিলেন, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ইউনুস সাহেবও ভালো উত্তর দিয়েছেন - এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সন্ন্যাসী যদি অপরাধ করে অপরাধী, ইমাম অপরাধ করলে অপরাধী। ভালো সন্ন্যাসী হলে কি অপরাধ করবে? সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ৪০ বছর ধরে কাজ করছে, সবার সামনে বলছি, ক'টা থানায় কেস দেখেছেন? অপরাধ হল অপরাধ।'
এর আগে গত পরশু বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধেছিল বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে। এই আবহে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারত সরকারের কাছে আরও নিরাপত্তা প্রদানের দাবিও জানানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় বাংলাদেশের দেপুটি হাইকমিশনের সামনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে কলকাতা পুলিশ। দিল্লিতেও বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের নিরাপত্তার নজরদারির দায়িত্বে থাকবেন একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার। এছাড়াও থাকবেন ২ জন ইন্সপেক্টর। ৬ জন করে এএসআই এবং এসআই পদমর্যাদার অফিসার থাকবেন। মহিলা ও পুরুষ মিলিয়ে ৩০ জন লাঠিধারী কনস্টেবল থাকবেন ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে।