মানুষের জীবনের কি কোনও দাম নেই? এই প্রশ্নই উঠেছিল সেদিন, যেদিন বেপরোয়া গতিতে একটি গাড়ি প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল পথচারীর। নিত্যদিন পথ দুর্ঘটনায় কারও না কারও প্রাণ যায় এই শহরে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও এই গতির বলি একেবারে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, প্রাণ হাতে করে রাস্তা পারাপার করতে হচ্ছে। তাছাড়া একদিন আগেই ওই রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় একজনের। আর তাতেই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। রাস্তায় নেমে এসে শুরু হয়ে গেল প্রতিবাদ। যাঁরা প্রতিবাদ দেখালেন, তাঁরা সকলেই হবু ইঞ্জিনিয়ার। এই আবহে নিজেদের মেধাশক্তিকে কাজে লাগালেন কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়ারা।
একাধিকবার এই পথ দুর্ঘটনা ঠেকাতে নানা অভিযোগ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাতে বিশেষ কোনও লাভ হয়নি। যখন কোনও তরফ থেকেই সাড়া মিলছে না তখন ছেনি, ইট নিয়ে পড়ুয়ারাই রাস্তায় বসে পড়লেন। আর তৈরি করে ফেললেন স্পিড ব্রেকার। যা এই গতিকে সবার সামনে নিয়ে আসবে আর চালককে সতর্ক করবে যাতে কম গতিতে গাড়ি চালায়। এই নজিরবিহীন প্রতিবাদের সাক্ষী থাকল বিধাননগর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ক্যাম্পাসের সামনে বেপরোয়া গাড়ির জেরে পথ দুর্ঘটনা বাড়ছে। এই পথ দুর্ঘটনা থেকে নিজেদের এবং এলাকার মানুষজনকে বাঁচাতে এভাবেই নিজেরা রাস্তার উপরে স্পিড ব্রেকার তৈরি করে ফেললেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ক্যাম্পাস বিধাননগরে।
আরও পড়ুন: নিহত চিকিৎসক মেয়ের জন্মদিনে গাছ লাগালেন বাবা–মা, প্রয়াগরাজে তর্পণ সুকান্তর
এখানে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলে বলে পড়ুয়াদের অভিযোগ। আর তার জেরে একের পর এক পথ দুর্ঘটনা এখানে ঘটে যায়। এমনকী এখানে হস্টেলের সামনের রাস্তায় র্যাশ ড্রাইভিং হচ্ছে। বারবার বলেও প্রতিকার মেলেনি। তাই পড়ুয়ারাই নেমে পড়েন বাম্পার তৈরি করতে। কদিন আগে হস্টেলের সামনের রাস্তায় একটি গাড়ি পিষে দেয় এক ভবঘুরেকে। তাতে তাঁর মৃত্যুও হয়। এই ঘটনার পরই পড়ুয়াদের ক্ষোভ চরমে ওঠে। কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শুভাশিস শিট জানান, অনেকদিন ধরে হস্টেল, ক্যাম্পাস লাগোয়া এই সার্ভিস রোডে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলছে। বারবার বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট, বিধাননগর পুরসভাকে স্পিড ব্রেকার এবং র্যাশ ড্রাইভিং ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। যদিও কিছুই হয়নি।
তাই এবার নিজেরাই মেধাকে কাজে লাগিয়ে পথ দুর্ঘটনা রোখার চেষ্টা করলেন। এভাবে নিজেরা উদ্যোগ নেওয়ায় মানুষের উপকারই হবে। শুভাশিস–সহ কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র ছাত্ররা এই কাজ করতে শুরু করেন। তাঁরাই স্পিড ব্রেকার তৈরির কাজে হাত লাগান। কয়েকজন শিক্ষকও সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের সাহায্য করেন। এই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, হস্টেলের সামনে রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলা বন্ধ করতে একাধিকবার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। যদিও বিধাননগর পুরসভার ডেপুটি মেয়র (রাস্তা) অনীতা মণ্ডল বলেন, ‘আমার কাছে স্পিড ব্রেকারের জন্য কোনও আবেদন আসেনি। এলে অবশ্যই সেটা করা হতো।’