এই বছরের গরম টের পাইয়ে দিয়েছে জলাশয়, গাছ না থাকার ফল কেমন হয়। এখন মানুষ মেতেছে নগরায়নে। তার জেরে গাছ যেমন কেটে ফেলছে তেমন বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে জলাশয়। এই পরিস্থিতিতে এবার বিধাননগরে জলাশয় কতগুলি আছে তা জানতে শুরু হচ্ছে সমীক্ষা। আর এই কাজ করতে গিয়ে লোকেশন ম্যাপিং প্রযুক্তির সাহায্যে জিও ট্যাগ করা হবে বলে খবর। সল্টলেক, কেষ্টপুর, রাজারহাট, বাগুইআটি এলাকার জলাশয়গুলির জিও ট্যাগ করা হবে। ফলে অ্যাপের মাধ্যমে অফিসাররা দেখে নিতে পারবেন, কোথায় জলাশয় আছে। এমনকী জলাশয় ভরাট আটকানো সহজ হবে এই পদ্ধতিতে বলে মনে করা হচ্ছে।
কিছুদিন আগে কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম শহরের জলাশয় ভরাট করা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। আর এবার বিধাননগরের মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) রহিমা বিবি বলেন, ‘জলাশয় ভরাটের খবর আমাদের কাছে আসছে। তাই জলাভূমি কী অবস্থায় রয়েছে, তার সংখ্যায় কত? সেটা জানাটা জরুরি।’ তাই জলাশয় সমীক্ষা করার জন্য পরিবেশ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। যাঁরা ঘুরে ঘুরে এই কাজটা করবেন। তারপর জলাশয়ের তালিকা পুরনিগমের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপে আপলোড করা হবে। ছবিও থাকবে সেখানে। জিও ট্যাগিংয়ের দায়িত্বে থাকছেন পুরনিগমের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অফিসাররা।
আরও পড়ুন: স্কুলের পানীয় জলে মদের গন্ধ, ট্যাঙ্ক খুলতে মিলল বোতল, আরামবাগে তোলপাড় কাণ্ড
বিধাননগর পুরনিগম সূত্রে খবর, আগামী তিন মাসের মধ্যে সমীক্ষা এবং ট্যাগিংয়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। পুরনিগমের কন্ট্রোল রুমে জলাশয় ভরাটের অভিযোগ একাধিকবার এসেছে। জলাশয় বুজিয়ে আবাসন গড়ার বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। তাই সেটা মেনে চলছে সব পুরসভা। তাই এবার আরও কড়াকড়ি করা হচ্ছে। জলাভূমি ভরাট প্রক্রিয়া বন্ধ করতে অনেক সময়ই সমস্যায় পড়তে হয় পুরসভা কর্তাদের। এই সমস্যা ঠেকাতেই জিও ট্যাগিং করা হচ্ছে। জিও ট্যাগিং মানচিত্রে থাকবে—জলাভূমির বাউন্ডারি, নিকাশি খালের তথ্য, ল্যান্ডমার্ক, জলাশয়ের সাম্প্রতিক অবস্থা।
২০১৫ সালে পুরনিগম হওয়ার পরে রাজারহাট–গোপালপুর পুরসভা মিশে যায়। তখন বিধাননগরের ওয়ার্ড বেড়ে হয় ৪১। কেষ্টপুর, নয়াবাদ, দশদ্রোণ, বাগুইআটি এবং সুকান্তনগর থেকে জলাভূমি বুজিয়ে ফেলার বিস্তর অভিযোগ এসেছে। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, পাঁচ বছর আগেও বাংলায় জলাভূমি ছিল ৩৮,৫২০। এখন সংখ্যাটা কমে ২৭,৮২৬ দাঁড়িয়েছে। তাই নতুন করে যাতে জলাশয় ভরাট না হয় তার জন্য পুরসভা–পুরনিগমকে পদক্ষেপ করার কথা বলেছে রাজ্য পুর দফতর। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘শুধু সমীক্ষায় থেমে থাকলে চলবে না। বাস্তবে ভরাট ঠেকাতে পদক্ষেপ করতে হবে’।