১১২ ফুটের দুর্গাপ্রতিমা। রানাঘাটের এই পুজোকে ঘিরে দিনের পর দিন ধরে নানা টানাপোড়েন চলছে। এমনকী এই পুজোকে ঘিরে মামলাও হয়েছে। তবে এবার মহালয়ার সকালে পুজো উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা পুজো করবেন না। তার একটা বড় কারণ হল মামলা লড়ার মতো টাকা তাঁদের কাছে নেই। সেক্ষেত্রে এই পুজোকে ঘিরে আইনি জটিলতার মধ্য়ে তারা আর থাকতে পারছেন না।
রানাঘাটের ১১২ ফুটের দুর্গা প্রতিমা। উদ্যোক্তাদের তরফে দাবি করা হয়েছিল বিশ্বের সবথেকে উঁচু প্রতিমা তাঁরা তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু নানা কারণে তাঁরা এবার সরে আসছেন। আসলে কলকাতা হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা হয়েছিল। হাইকোর্টের তরফে জেলা প্রশাসনকে অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি দেখার জন্য় জানিয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সহ একাধিক দফতরের তরফে বলা হয়েছিল তারা এই পুজোর অনুমতি দিতে পারছে না। তার পেছনে নির্দিষ্ট কারণও তারা দেখিয়েছিল।
জেলাশাসকের দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, দমকল, পুলিশ, বিডিও, রানাঘাট এসডিও, বিদ্যুৎ দফতরের তরফে কোথাও কোনও রকম অনুমতি মেলেনি। সেকারণে আর এই প্রতিমা তৈরির অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে এই ১১২ ফুটের প্রতিমা আর করা যাবে না।
এদিকে বিভিন্ন দফতরের তরফে তাদের সমস্যার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, যত পরিমাণ বিদ্য়ুৎ খরচের কথা বলা হয়েছে সেই পরিমাণ বিদ্যুতের যোগান দেওয়া সম্ভব নয়।
দমকল দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগের বছরের পুজো ও জমির অনুমতি পত্র জমা দিতে হবে।
অন্যদিকে পুলিশের তরফে অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে এই প্রতিমা দেখতে বিরাট ভিড় হবে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই প্রতিমা দেখতে বিরাট ভিড় হতে পারে। সেক্ষেত্রে পদপিষ্ঠ হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। ১২ ফুট রাস্তার উপর এই মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে মণ্ডপের যে আকার সেই মাপের ক্ষেত্রে রাস্তাটা আরও প্রশস্ত হওয়া দরকার। সেকারণেই এই পুজোর অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না।
তার সঙ্গেই বিসর্জনের সময় বিরাট প্রতিমা নিয়ে যদি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় সেক্ষেত্রে আরও বিরাট সমস্যা হতে পারে। সেকারণে পুলিশের তরফে এনিয়ে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এমনকী একটা সময় খোদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এই ১১২ ফুটের প্রতিমা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। মূলত এই প্রতিমা দেখার জন্য় প্রচন্ড ভিড় নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
তবে এবার রানাঘাটের কামালপুর এলাকার অভিযান সঙ্ঘ পুজো না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, এই প্রতিমা তৈরি করতে এখনও পর্যন্ত ৬০ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। গ্রামের লোকজনই এই কাজ করছিলেন। তবে আদালতে যেতে গেলে টাকা পয়সা লাগবে। কিন্তু আদালতে যাওয়ার টাকা পয়সা তাদের হাতে নেই। কিন্তু সেই টাকা তারা আর জোগাড় করতে পারছেন না। এদিকে এই পুজোকে ঘিরে গোটা গ্রামের মধ্যে একটা বিরাট উৎসাহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এবার হয়তো সব শেষ। মহালয়াতে বিষাদ গ্রাস করেছে পুজো উদ্যোক্তাদের। চোখের সামনে দিনের পর দিন ধরে প্রতিমা রূপ পাচ্ছিল। গ্রামবাসীরা আশা করেছিলেন দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে প্রতিমা দেখতে আসবেন। এই প্রতিমাকে কেন্দ্র করে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নতিও হবে। কিন্তু সব কার্যত শেষ।