একদিকে বিতর্কিত কৃষি বিল, আর এক দিকে হাথরাসে দলিত কন্যাকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও দেহ দাহ করার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। বিজেপি–র বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে সমস্ত রাজনৈতিক দল। শনিবার একদিকে উত্তরপ্রদেশের ওই গ্রামে ৩৫ জন সাংসদকে নিয়ে পৌঁছে যানন কংগ্রেসের রাহুল–প্রিয়াঙ্কারা। এদিকে, এদিনই কলকাতায় বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের পর সভামঞ্চে বিজেপি–কে ‘সব থেকে বড় মহামারী’ বলে গেরুয়া শিবিরকে আরও কোণঠাসা করে দিলেন মমতা।
কাঁধে কালো কাপড় ও হাতে একটি টর্চ নিয়ে এদিন গান্ধীমূর্তির পাদদেশে মঞ্চে ওঠেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যোগীরাজ্যের নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে কালো কাপড় বোঝা গেল কিন্তু হাতে টর্চ কেন? মঞ্চ থেকে নিজেই উত্তর দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন বলেন, ‘আমার হাতে টর্চ রয়েছে। এর পেছনে একটা কারণ রয়েছে। সারা দেশে দলিত, সংখ্যালঘু, কৃষক, গরিব মানুষের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে বিজেপি। তাঁদের অন্ধকারে ঠেলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আর তাঁদের আলোতে আনার জন্যই আজ আমার হাতে টর্চ। স্বৈরাচারী বিজেপি–র বিরুদ্ধে তৃণমূলের এই আন্দোলন চলছে এবং চলবে। আর তার প্রতীক হতে পারে এই টর্চ।’
দলিত ও সংখ্যালঘুদের ওপর বিজেপি–র অত্যাচারের প্রসঙ্গে তুলে মমতা বলেন, ‘ভোটের সময় দলিতের বাড়িতে খাবার খায় ওরা। ছবি–ভিডিও তোলানো হয়। কিন্তু সেই খাবার আসে হোটেল থেকে। আর ভোট মিটলেই দলিতদের ওপর শুরু হয় অত্যাচার। এদিকে, আমি কিছু করলেই বলে মুসলিমদের তোষণ করছি।’ বিজেপি–কে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘যখন মুসলিমরা বিপদে পড়েন তখন আমি মুসলিম। যখন আদিবাসীরা বিপদে পড়েন তখন আমি আদিবাসী। আজ দলিতরা বিপদে পড়ছেন, তাই আজ আমি দলিত।’ গেরুয়া শিবিরকে তাঁর কটাক্ষ, ‘হিন্দুরা বিপদে পড়লে তো আমার পদবী জানতে চাও না! মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদোয়ারা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি করে না।’
সভামঞ্চে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি–র বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘আজ ৬–৭ মাস ধরে মহামারী কোভিড নিয়ে আমরা লড়াই করছি। বিজেপি তোমার বন্দুক আর গুন্ডাবাহিনীকে আমরা ভয় পাই না। বিজেপি–ই এখন দেশের সব থেকে বড় মহামারী। গণতন্ত্রকে হাতিয়ার করেই তাদের শেষ করে ফেলতে হবে।’ মমতার কটাক্ষ, ‘গান্ধীজি, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ নয়, এখন দেশের সব থেকে বড় মহাপুরুষ হল বিজেপি। শুধু বড় বড় ভাষণ।’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘রাতের অন্ধকারে নিরবে নির্যাতিতা ওই মেয়েটির দেহ জ্বালিয়ে দিল যোগী সরকার। দিল্লিতে দাঙ্গা হল, নর্দমায় দেহ পড়ে ছিল। কিন্তু কেউ জানে না ক’জন মারা গিয়েছেন। কত পরিযায়ী শ্রমিক মারা গেল। বিজেপি বলছে, তথ্য নেই। কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। বিজেপি বলছে, তথ্য নেই।’ মমতা এদিন দেশবাসীকে সাবধান করে বলেন, ‘বিজেপি দেশের লজ্জা। পরিযায়ী শ্রমিক কাঁদছে। কৃষকরা কাঁদছে। দুর্ভীক্ষ আসছে জেনে রাখুন।’