আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কমপক্ষে ২০০ আসন চাই। এই লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন খোদ অমিত শাহ। কিন্তু বাংলায় ঠিক কত আসন পেতে পারে বিজেপি? দলের ‘অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা’ কিন্তু বলছে লক্ষ্য থেকে খানিকটা দূরেই রয়েছে দল। তাই আগামী ৩০ জানুয়ারি রাজ্যে যখন আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে রিপোর্ট বলে সূত্রের খবর।
এখানেই শেষ নয়, ৯ জানুয়ারি হিসাব খতিয়ে দেখতে আসছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তিনি খতিয়ে দেখে সিলমোহর দিলে তবেই এই রিপোর্ট যাবে অমিত শাহের কাছে। তবে রাজ্য নেতারা মনে করছেন লক্ষ্যপূরণ করতে সমস্যা হবে না। কারণ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি।
খড়দহে দলের সভায় শুভেন্দু অধিকারী জানান, লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে ১২০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তাই ক্ষমতায় আসতে দরকার আর ৩০টির মতো আসন। বাংলা দখলে ‘জাদু সংখ্যা’ ১৪৮। দলের ‘অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা’ ১৫০ থেকে ১৬০টি আসনে বিজেপি জয় পেতে পারে। এখন আরও খাটলে তবেই ২০০ আসন সম্ভব।
বাংলাকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। উত্তরবঙ্গের সব জেলা নিয়ে উত্তরবঙ্গ জোন। সেখানে আসনের সংখ্যা ৫৪। দলীয় হিসেব, ওখানে ৩০ থেকে ৩৫টি আসন মিলতে পারে। আলিপুরদুয়ারের কালচিনি বিধানসভা এলাকাতেও গুরুংয়ের প্রভাব কাজ করবে। কিন্তু জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় গুরুং–প্রভাব কাজ করবে না। কারণ সদ্য নাগরাকাটার তৃণমূল বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় ওই আসনটি নিয়ে আশাবাদী বিজেপি।
এরপরেই নবদ্বীপ জোন। আসনসংখ্যা ৬৩। এই জোনে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ। বিজেপি’র সমীক্ষা বলছে, এই এলাকায় ২৫ থেকে ৩০টি আসন মিলতে পারে। বনগাঁ ও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সব বিধানসভা আসনেই জয় পাওয়া যাবে। কৃষ্ণনগর ও বারাসত লোকসভা এলাকা থেকে চারটি করে আসন মিলতে পারে।
বিজেপির ‘অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা’, লড়াই কঠিন দেগঙ্গা, রাজারহাট–নিউটাউন আসনে। বসিরহাট লোকসভা এলাকা থেকে একটি আসন মিললেও মিলতে পারে। তবে অর্জুন সিংয়ের ব্যারাকপুর লোকসভা এলাকা থেকে আমডাঙা ছাড়া বাকি ছ’টি আসনেই জয় পাবে তারা। বিজেপি’র শক্তিশালী এলাকা রাঢ়বঙ্গ জোন। এই জোনে রয়েছে দুই বর্ধমান জেলা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূম জেলা মিলিয়ে ৫৭টি আসন। বিজেপি মনে করছে, ওই জোনে ৩০ থেকে ৩৫টি আসন মিলবে। এই জোনের আসানসোল, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর এবং পুরুলিয়া লোকসভা এলাকার সব আসনেই জয় মিলতে পারে ধরে নেওয়া হচ্ছে। দুই মেদিনীপুর ছাড়াও ঝাড়গ্রাম, হাওড়া ও হুগলি জেলার আসনগুলি নিয়ে রাজ্য বিজেপি’র সাংগঠনিক জোন মেদিনীপুর। সেখানে রয়েছে মোট ৬৯টি আসন। তৃণমূল ছেড়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় বড় সংখ্যায় আসন মিলতে পারে। দলের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, ৩৫ থেকে ৪০টি আসন আসবে এই জোন থেকে। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের লোকসভা কেন্দ্র মেদিনীপুর ছাড়াও ঘাটালের আসনগুলিতে দল ভাল ফল করবে মনে করেছে বিজেপি। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি, তমলুক মিলিয়ে আসতে পারে ১০ থেকে ১২টি আসন। হাওড়া জেলার আসনগুলি নিয়ে ধন্দ রয়েছে। বিজেপি’র আশা, বড় সংখ্যায় আসন মিলতে পারে হুগলি, আরামবাগ, শ্রীরামপুর লোকসভা এলাকা থেকে।
বাকি রইল কলকাতা জোন। এই জোনে রয়েছে ৫১টি আসন। কলকাতা ছাড়া রয়েছে সম্পূর্ণ দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ। এই জোনকে ‘তৃণমূলের দুর্গ’ বলা যায়। তবে বিজেপি মনে করছে, দলের পক্ষে যে ‘হাওয়া’ রয়েছে, তাতে এখানেও ফাটল ধরানো যাবে। ফলে বিজেপি’র ‘সহজ লড়াই’ থাকবে ২০টির মতো আসনে।
তবে এই হিসাবনিকেশের পরও বিজেপিকে ভাবাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ এখনও প্রচারে নামেননি তিনি। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রতিষ্ঠান–বিরোধী হাওয়া তৈরি হলেও তা একাই থামিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। ভোটের ঠিক আগে ‘নারদা-কাণ্ড’ প্রকাশ্যে আসার পরেও নিজের ভাবমূর্তি দিয়ে তিনি দলের জয়কে বিপুল আকার দিয়েছিলেন। এবার তাঁর সঙ্গে রয়েছে ভোট–কুশলী প্রশান্ত কিশোর। তিনি অন রেকর্ড চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বসে আছেন। যার পাল্টা দিতে পারেনি গেরুয়া শিবির। সুতরাং হতে পারে, পেতে পারি, ধরে নিয়ে যে সংখ্যা বিজেপি স্থির করেছে তা নাও মিলতে পারে।