সালটা ছিল ২০২১। বাংলার রাজনীতিতে পদ্মফুলের সমাহার দেখেছিলেন সকলে। এই বাংলায় তখন বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭টি আসন জিতে প্রধান বিরোধী দল হয় বিজেপি। আর তার আগে ২০১৯ সালে আগমনী সুর শুনিয়েছিল গেরুয়া শিবির। ১৮টি আসন জিতেছিল লোকসভা নির্বাচনে। কিন্তু ২০২১ সালে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর থেকে আর একটিও নির্বাচনে সাফল্য পায়নি বঙ্গ–বিজেপি। বরং যত দিন এগিয়েছে ততই ভরাডুবি হয়েছে। সদ্য ৬টি উপনির্বাচনে গোহারা হেরেছে বিজেপি। তাই আর ১৫ মাস পর ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে বাংলায় কুপি নিয়ে খুঁজতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে। তাই আগামী বিধানসভায় বাংলার কুর্সি দখল তো দূরে থাক ৫০টি আসন জিততে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১২ আসন জিতেছে। যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি আসন জিতে নেয়। সেখানে বিজেপির ৬টি আসন কমে গিয়েছিল। এই আবহে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর সেই রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি এবং আরজি কর হাসপাতালের ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল উপনির্বাচনে। কিন্তু সেসব তো কাজে লাগলই না উলটে জেতা আসন মাদারিহাট হেরে বসে রইল বিজেপি। সুতরাং উত্তরবঙ্গের মাটি যে আলগা হচ্ছে সেটা একপ্রকার নিশ্চিত।
আরও পড়ুন: বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় হুগলি সেতু, ১২ ঘণ্টা যান চলাচল করবে না, বিকল্প পথ কোনটি?
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করেন, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের এখন ছন্নছাড়া অবস্থা। যার প্রভাব বুথকর্মীদের উপর পড়েছে। ফলে তাঁরা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। এই বিষয়ে বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলছেন, ‘দলের সম্পদ বুথস্তরের কর্মীরা। তাঁদের বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। তাই তাঁরা দায়িত্ব পালন করেননি। বাংলায় এখনও সব বুথে বুথ কমিটি গড়ে ওঠেনি। সাংগঠনিক দুর্বলতাই ব্যর্থতার কারণ।’ এই পরিস্থিতিই এখন বিজেপির কাছে যথেষ্ট আশঙ্কার। এখানে সুনীল বনসল, মঙ্গল পান্ডে, আশা লাকড়া প্রত্যেকেই যে রিপোর্ট পেয়েছেন তাতে বঙ্গ–বিজেপির অবস্থা ভাল নয়। আর বঙ্গ–বিজেপি যে রিপোর্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পাঠিয়েছেন সেটার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই বলে সূত্রের খবর।
বাংলায় মানুষের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের জনসংযোগে বিরাট ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সাংসদ–বিধায়করা পর্যন্ত নিজেদের এলাকায় সময় দেন না বলে রিপোর্ট পেয়েছেন। তার সঙ্গে রয়েছে দলীয় নেতৃত্বের প্রকাশ্য অন্তর্দ্বন্দ্ব। তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলকে হারাতে যে সাংগঠনিক কুশলতা, দক্ষতা, পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল তা করতে পারেনি বঙ্গ–বিজেপির নেতারা। এই বিষয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, ‘রাজ্যের একাধিক সাংসদ অভিযোগ করেছেন তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বসে কৌশল ঠিক করতে চাইলেও তাঁদের সময় দেওয়া হয় না। তাই দূরত্ব ক্ষতি করছে।’ এইরকম দলের অবস্থা নিয়ে যদি ২০২৬ সালের বিধানসভায় ঝাঁপায় বিজেপি তাহলে ৫০টি আসনও জুটবে না বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এখন নেমে দাঁড়িয়েছে ৬৬।