রাজ্যে বিধানসভা ভোটের বাকি এখনও ১ বছরের বেশি সময়। তার আগে তৃতীয় তৃণমূল সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটের দিন থেকেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আকচাআকচি শুরু করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তুললেন এমন অভিযোগ যে অভিযোগে বিদ্ধ তিনি নিজেই। বুধবার রাজ্য বাজেট পেশের পর বিধানসভায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় রাজ্যের ভোটার তালিকায় বিহারের লোকেদের নাম তুলছে বিজেপি। অভিযোগ শুনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রশ্ন, ভোটার তালিকা তৈরির এক্তিয়ার তো জেলাশাসকের। তাঁদের কেন কিছু বলছেন না মমতা।
বুধবার মমতা অভিযোগ করেন, ‘অনলাইন ভোটার লিস্টের নামে তোমরা নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা নিচ্ছো আর ইডি - সিবিআইকে পাঠাচ্ছো। আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না। এটাই ভূতুড়ে রাজনৈতিক দলের কাজ। আমি কোনও দলের নাম করছি না। আমার ভাষায় ভূতুড়ে রাজনৈতিক দল। যারা এদের পাঠিয়ে বিহারের লোকেদের নাম তুলছে অনলাইনে। কেন অনলাইনে হবে?’
মমতার দাবি, ‘মহারাষ্ট্রে কী করে বিজেপির ৪০ লক্ষ ভোট বাড়ল? আর দিল্লিতেই বা আপনারা কী করেছিলেন? একদিন না একদিন তো বেরোবে। অংকটা কেউ দেরিতে কষে। কেউ আগে কষে। অংকটা কষতে জানতে হয়। আমরা অংক কষে দেখে নিয়েছি এখানেও বাবুরা এসে বসে আছেন প্রত্যের বিধানসভায় ২০ - ৩০ হাজার বাইরের লোকের নাম ঢোকাবে আর নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করবে। আর যারা বাংলার লোক নয়, বাংলার ভোটার নয় তারা এসে ভোট দেবে। এই পরিকল্পনা কিন্তু আপনাদের আমরা ভেস্তে দেব।’
মমতার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘১৪ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী কাণ্ডজ্ঞান আছে? ভোটার তালিকার রেজিস্ট্রেশন অফিসার তো জেলাশাসক। ১৬ লক্ষ ভুয়ো ভোটার আমরা বার করে দিয়েছি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে আমরা নাম গুলো তালিকা থেকে কাটাবো।’
বলে রাখি, বাংলাদেশে অরাজকতা তৈরি হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়েছে একটার পর একটা বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের অনেকের কাছেই পাওয়া গিয়েছে ভারতীয় পরিচয়পত্র। বহু ক্ষেত্রে তদন্তে উঠে এসেছে যে নথির ভিত্তিতে সেই নথি তৈরি হয়েছে তা বাংলাদেশিদের দিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত কোনও পঞ্চায়েত। পাসপোর্ট জালিয়াতিতে এখনও সিআইডির গোয়েন্দাদের নজরে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূল পরিচালিত কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েত। ওদিকে মালদার রসিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান লাভলি খাতুনের ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে তিনি বাংলাদেশি নাগরিক। এরই মধ্যে পালটা বিজেপির বিরুদ্ধে বিহারীদের নাম বাংলার ভোটার তালিকায় তোলার অভিযোগ করলেন মমতা। তাও এমন এক জায়গা থেকে যেখানে এই অভিযোগের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো সঙ্গীরা বলছেন, মমতা যখনই এমন কোনও অভিযোগের মুখে পড়েন যা খণ্ডন করার ক্ষমতা তাঁর নেই, তখন অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করতে শুরু করেন তিনি। এতে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হলে মূল অভিযোগ থেকে মানুষের নজর ঘুরে যায়। এবারও সম্ভবত সেটাই করার চেষ্টা করছেন তৃণমূলনেত্রী।