এখন তৃণমূল ভবনে কান পাতলেই অনেকে একটা গানের লাইন শুনতে পাবেন। সেটা হল—‘সেই তো আবার কাছে এলে।’ মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরার পর অনেক নেতাই এখন এই গান গাইছেন। কারণ তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর কি কি মন্তব্য করেছিলেন তা তাঁদের মনে আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তিতে মমতা ‘নরমপন্থী’দের দলে ফেলেছেন মুকুল রায়কে। সাড়ে তিন বছর বিজেপিতে থাকাকালীন তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি মুকুল রায়। বিশ্ব বাংলার লোগো নিয়ে অভিষেকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।
মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর যা যা মন্তব্য করেছিলেন তা একবার দেখে নেওয়া যাক— তাঁর দাবি ছিল, বিশ্ব বাংলা রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিষ্ঠান নয়। এই বিশ্ব বাংলার লোগোর মালিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিশ্ব বাংলাই যখন বিশ্বকাপ ফুটবল স্পনসর করেছিল।
বিজেপিতে যোগ দিয়ে মুকুল রায় বলেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসে থেকে ‘পাপ’ করেছেন তিনি। আর বিজেপিতে এসে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করছেন। মমতার যে সব দুর্বলতা আছে, সেগুলি ঢেকে রেখে আমরা মমতাকে ‘মমতা’ করেছি। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে সারা বাংলা ঘুরে বেড়াচ্ছি। বাংলায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম না করা পর্যন্ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে না।
মমতাকে ‘অশিক্ষিত’ও বলেছেন তিনি। এক সভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এমন অশিক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী আর দেখেছেন? বলে দিলেন গান্ধীজির অনশন ভাঙাতে নাকি রবীন্দ্রনাথ জল নিয়ে গিয়েছিলেন। এত বড় অশিক্ষিত আর দেখিনি।’
এমনকী প্রকাশ্যে মুকুল বলেছিলেন, ‘মমতা বলেন কৃষি আর শিল্প হল হাসি আর খুশি। ‘হাসি’ তো কোথায় উড়ে গিয়েছে, ‘খুশি’ও আর নেই। আগে যখন বুদ্ধবাবুরা বিদেশ যেতেন তখন মমতা কটাক্ষ করে বলতেন গরমকালে হাওয়া খেতে যাচ্ছে। আর এখন দেখি শিল্প আনতে মাঝেমধ্যেই মমতা বিদেশ যাচ্ছেন। আবার একা যাচ্ছেন না। সঙ্গে ৪০-৪২ জন লোককে নিয়ে যাচ্ছেন।’
মুকুল রায় বলেছিলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস কখনও রামনবমী করেনি। হঠাৎ কেন করল?’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘মেট্রো ডেয়ারি বিক্রি করে মমতার দল কত টাকা কাটমানি খেয়েছে? বিচার হোক। সবথেকে বড় বিলগ্নিকরণের মাস্টার মমতা। উনি বলুন কত টাকা খেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস?
কেন মুকুল রায়কে কৃষ্ণনগরে টিকিট দেওয়া হল? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। তার জবাবে মুকুল রায়ের মন্তব্য ছিল, ‘আমি এমন অনেক কিছুই শুনেছি, জবাব দিই না, দেবও না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছে।’ মুকুলের মত ছিল, ‘মমতা নিজের লড়াই থেকে সরে গিয়েছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ভুলে গেলেন একদিন বুদ্ধবাবুর বাড়ি ঘেরাও করতে গিয়েছিলেন। সিপিআইএম আর মমতার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।’
বিজেপিতে যোগ দিয়েই মুকুল বলেছিলেন, ‘২০০৭ সালে মানুষ মারা যাচ্ছিল। আর একদিকে চলচ্চিত্র উৎসবে ঘণ্টা বাজাতে হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ সেই একই দৃশ্য। শুধু মানুষটা পাল্টে গিয়েছে। ডেঙ্গিতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আর নাচা–গানা–খাওয়া, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর প্রথম সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার যদি সরকার চালানোর অধিকার থাকে, আমারও সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে।’ আজ সব অতীত। এখন তৃণমূল কংগ্রেসই সেফ হোম। বিজেপিটা করা যায় না—এই মন্তব্যও মুকুল রায়ের।