সমস্ত ছকে রাখা পরিকল্পনা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। যে আস্ফালন নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি নেতা–নেত্রী থেকে প্রার্থীরা দেখিয়েছিলেন এখন তা বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ২০০ আসন তো দূরের ব্যাপার। ১০০ আসন জিততে পারেনি বিজেপি। ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন ফেরি করলেও ৭৭ আসনে আটকে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। দুই সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক এবং জগন্নাথ সরকার বিধায়কপদ ছাড়ায় বিধানসভায় বিজেপি-র শক্তি আরও কমে ৭৫। এই পরিস্থিতিতে দলের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে একাধিক বৈঠক ডাকা হলেও তাতে সাড়া দিচ্ছেন না বেশিরভাগ পরাজিত প্রার্থীরা।
বৈঠকে ডাক পেয়েও অনুপস্থিত থাকার ছবি দেখা গিয়েছে শুক্রবার। হেস্টিংসে দলের দফতরে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল সব পদাধিকারী ও প্রধান নেতাদের। কিন্তু সেখানে উপস্থিতির হার অত্যন্ত কম। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপর্যয়ের পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে রাজ্যে দায়িত্বে এসেছেন অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুঘ। তবে শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী–সহ অন্যান্যরা।
এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ডাক পেয়েও আসেননি জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, লকেট চট্টোপাধ্যায়, রথীন বসু। রাজ্য বিজেপিতে সহ–সভাপতি রয়েছেন ১২ জন। তাঁদের মধ্যে নামমাত্র হাজির ছিলেন শুক্রবারের বৈঠকে। ১০ জন রাজ্য সম্পাদকের অনেকে হেস্টিংস অফিসের ছায়া মাড়াননি। এমনকী রাজ্য কমিটির বাছাই কয়েকজন সদস্যকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিধাননগরে পরাজিত প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত। তিনিও আসেননি। গরহাজির ছিলেন ডোমজুড়ে পরাজিত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য বিজেপির এক প্রথমসারির নেতার দাবি, ‘নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এঁদের অনেকেই কোনও বৈঠকেই আসছেন না। অনিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন ভারতী ঘোষ। এই পরাজিত নেতা–নেত্রীর এখন হাবভাব রাত গ্যায়ি বাত গ্যায়ি।’
যদিও এই অনুপস্থিতির বিষয় নিয়ে দিলীপ ঘোষের সাফাই, ‘করোনাভাইরাসের বাড়বাড়ন্তে অনেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছেন। আবার অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আবার কোথাও কোথাও সন্ত্রাস হচ্ছে, যার ফলে তাঁরা এলাকা ছেড়ে কলকাতায় আসতে পারছেন না। কর্মীদের সামলাচ্ছেন। তবে সকলেই দলের যোগাযোগের মধ্যে রয়েছেন।’ কিন্তু নির্বাচনের সময় যখন করোনা সংক্রমণে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছিলেন তখন দফা কমাতে রাজি হননি বিজেপি নেতারা। এমনকী মাস্ক ছাড়াই বড় জমায়েত করা হয়েছিল। তাহলে এখন কেন করোনা সংক্রমণের কথা বলে বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা? উঠছে প্রশ্ন।