এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির এমন ভরাডুবি কেন? এই প্রশ্ন ওঠে বিজেপির পর্যালোচনা বৈঠকে। সেখানে নিচুতলায় সংগঠনের দুর্বলতা থেকে শুরু করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং নেতা–কর্মীদের মধ্যে ইডি–সিবিআই নির্ভরতা বেড়েছিল বলেই দলকে ডুবেছে তথ্য উঠে আসে। আর সেটা কার্যত স্বীকার করে নিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। দলীয় সূত্রে খবর, সোমবার সল্টলেকের পার্টি অফিসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। সেখানে রাজ্য ও জেলা নেতাদের উদ্দেশে সুকান্ত মজুমদারের উল্লেখযোগ্য মন্তব্য, ‘ইডি–সিবিআইয়ের উপর ভরসা করলে চলবে না। শুধু দিল্লির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবেন না। আত্মনির্ভর হন। বুথকে শক্তিশালী করতে পারলে তবেই তৃণমূল কংগ্রেসের মোকাবিলা করা যাবে।’
আজ যেটা রাজ্য সভাপতি নির্দেশ দিচ্ছেন আগে সেটা নিয়ে বিজেপির অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তখন তাতে কেউ গুরুত্ব দেননি বলে কয়েকজন আদি নেতাদের দাবি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও এই কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে বড় হাতিয়ার মনে করে এগিয়েছিল বলে অভিযোগ। বিজেপি ইডি–সিবিআইকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ একাধিকবার তোলে তৃণমূল কংগ্রেস এবং দেশের তামাম বিরোধী দলগুলি। এবার দলের পর্যালোচনা বৈঠকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির নির্ভরতার কথা কার্যত স্বীকার করে নিলেন বিজেপির বালুরঘাটের সাংসদ।
আরও পড়ুন: ‘আজই উড়িয়ে দেওয়া হবে এসএসকেএম’, হুমকি মেলে আলোড়ন হাসপাতাল চত্বরে
এই বৈঠকে অনেক নেতা আবার সুকান্ত মজুমদারের প্রশংসা করেছেন। কারণ তিনি সঠিক কথা বলছেন বলে তাঁদের দাবি। ইডি–সিবিআই দিয়ে সংগঠন বাড়বে না এটা সঠিক কথাই। ইডি–সিবিআইকে যেভাবে হাতিয়ার করা হয়েছে সেটা বাংলার মানুষ ভালভাবে নেয়নি এতদিন পর পর্যালোচনায় উঠে এল বলে সূত্রের খবর। সোমবার এই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা। তবে ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী, সতীশ ধন্দ, রাজ্যের শীর্ষ নেতারা, জোন ও জেলা ইনচার্জ–সহ একাধিক মোর্চার সভাপতি। এখানেই উঠে আসে বুথের বেহাল দশা। এমনকী ভুল রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে দিল্লির নেতাদের। জয়ী সাংসদ জগন্নাথ সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ তোলেন, রানাঘাটে পার্টির সংগঠন তাঁর বিরুদ্ধে ছিল, সূত্রের খবর মিলেছে।
আবার সংসদে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলা হলেও বঙ্গ বিজেপি মহিলাদের প্রার্থী করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এক মহিলা নেত্রী। যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের ১২ জন মহিলা সাংসদ দিল্লি গেলেন জিতে। এই উদাহরণও তুলে ধরা হয়। দলবদলুদের টিকিট দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ দেখা যায় বৈঠকে। একাধিক জায়গায় দলের প্রার্থীর সঙ্গে জেলা সভাপতিদের সুসম্পর্ক নেই বলে বৈঠকে উঠে এসেছে। সুকান্ত মজুমদার বৈঠকে জানান, ২০৫টি বিধানসভায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি। ৯০টি বিধানসভায় জিতেছে। ভোট বেড়েছে ১ শতাংশ। বিজেপি একক শক্তি হিসেবে উঠে আসছে বাংলায়। তাহলে কেন ৬টা আসন কমে গেল? এই প্রশ্নের উত্তর তিনি জানতে চেয়েছেন নেতাদের থেকে বলে সূত্রের খবর।