কয়েকদিন ধরেই রাজ্য–রাজনীতি চর্চা শুরু হয়েছিল রাজ্যের তৈরি করা খসড়া বক্তৃতা পড়বেন কি রাজ্যপাল? এমনকী রাজ্যপাল নিজে বেশ কয়েকটি জায়গা পাল্টে তা পাঠিয়েছিলেন নবান্নে। কারণ সেখানে যা লেখা আছে তার সঙ্গে রাজ্যপাল সহমত পোষণ করতে পারছেন না। কিন্তু তখন মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠমহলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাজ্য মন্ত্রিসভায় পাশ হওয়া খসড়া বক্তৃতায় কোনও পরিবর্তন তিনি বরদাস্ত করবেন না। রাজ্যপালকে সেটাই পড়তে হবে। তাই আবার রাজভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেই খসড়া বক্তৃতা। এই বেগতিক পরিস্থিতি দেখে পরিকল্পনা তৈরি হয়।
সূত্রের খবর, পরিকল্পনাটি তৈরি হয় রাজ্যপাল এবং বিরোধী দলনেতার মধ্যে। তারপর তাতে চূড়ান্ত সিলমোহর দেয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যার জন্যই নয়াদিল্লিতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। নীল নকশায় তৈরি ছকে উঠে আসে, রাজ্যপাল যখন বক্তৃতা দিতে শুরু করবেন তখন বিজেপি বিধায়করা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবেন। আর তাতে বিরক্ত হয়েছেন দেখিয়ে বেরিয়ে যাবেন রাজ্যপাল। তাতে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। সেই মতোই বাজেট ভাষণ শুরু করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তারপরই শুরু হল বিজেপি বিধায়কদের তুমুল বিক্ষোভ। সেই পরিস্থিতিতে চার মিনিটের মধ্যে বাজেট ভাষণ শেষ করে দেন। অর্থাৎ বাজেট অসমাপ্ত রেখেই বিধানসভা ছেড়ে দেন জগদীপ ধনখড়।
পরিকল্পনা সফল। রাজ্যের তৈরি খসড়া পুরোটা পড়তে হল না। আবার তিনি পড়তে রাজি ছিলেন এটাও বোঝানো গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। পূর্ণাঙ্গ বাজেটের ভাষণ নিয়ে নবান্ন এবং রাজভবনের সংঘাত শুরু হয়েছিল। রাজ্যের পাঠানো ভাষণের খসড়াপত্রের কিছু অংশ নিয়ে আপত্তি জানান জগদীপ ধনখড়। কিন্তু রাজ্যের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রথামতো মন্ত্রিসভায় বাজেট ভাষণ পাশ হয়ে গিয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বাজেট ভাষণে রাজ্যপাল কী বলেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। এবার এই ছক কষে এড়িয়ে যাওয়া হল বক্তৃতা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক দিল্লির বিজেপি নেতা জানাচ্ছেন, ‘এটা পুরোটাই পূর্ব–পরিকল্পিত। যা অনেকেই ধরতে পারেননি। তবে রাজ্যপালের এক্তিয়ার আছে যে কোনও সময়ে বক্তৃতা থামিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার। তিনি সেটাই করেছেন। কারণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে তো আর ভাষণ দেওয়া যায় না। এই বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে রাজ্যপাল পদক্ষেপ করেন কিনা সেটাই দেখার।’ এই গোটা পরিকল্পনাটি রচনা করা হলেও তা সত্যিই কেউ টের পাননি। সূত্রের খবর, বিজেপিকে এবার টিট ফর ট্যাট দিতে তাঁরাও পরিকল্পনা ছকে ফেলেছেন। যে ফাঁদে পা দিতে চলেছেন বিজেপি বিধায়করা। আর বিধানসভার অন্দরে এই দাবা খেলায় সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য–রাজনীতি।
উল্লেখ্য, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে চিঠি লিখেছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে। তার উপর এবার সরাসরি রাজ্যপালের ভাষণ সম্প্রচার হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপালের এই অনুরোধও রাখা হয়নি। সঙ্গে রাজ্যপালের পাঠানো পরিবর্তন মেনে নেওয়া হয়নি। হাওয়ালা জৈন কাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডেও তাঁকে জড়িয়ে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে এই প্রতিশোধ তিনি নিলেন বলেও অনেকে মনে করছেন।