একদিকে যখন বাংলাদেশের অন্দরেই সেদেশের কট্টরপন্থী মুসলমানদের হাতে আক্রান্ত ও অত্যাচারিত হচ্ছেন হিন্দু-সহ অন্য সংখ্যালঘু নাগরিকরা, সেই প্রেক্ষাপটে সরাসরি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের অবাধ অনুপ্রদেশ করতে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ তুললেন রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য।
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে তিনি অভিযোগ করেন, কলকাতা লাগোয়া বিধাননগর বা সল্টলেকে 'সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স' (এসআইএনপি) নামে যে পারমাণবিক গবেষাকেন্দ্রটি রয়েছে, তার সীমানা পাঁচিল ঘেঁষে বেশ কিছু লোকজন বেআইনিভাবে বসবাস শুরু করেছে।
শমীকের অভিযোগ, যারা ওখানে দল বেঁধে পরিবার নিয়ে থাকছে, তারা কেউই ভারতীয় নয়। আদতে তারা সকলেই বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে উৎখাত হয়ে আসা লোকজন। এদের মধ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে মায়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার সবকিছু জেনেও এই অনুপ্রবেশকারীদের সেখান থেকে হটানোর বা তাদের পাকড়াও করার কোনও চেষ্টা করছে না বলে অভিযোগ করেন বিজেপি সাংসদ।
তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার কেবলমাত্র ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে এই অনুপ্রবেশকারীদের অবাধে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকতে দিচ্ছে। ফলত, এই অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা ভারতের কাছে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শমীক আরও অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও আধিকারিকরা এই বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, পারমাণবিক শক্তি প্রতিষ্ঠান বা সেই সংক্রান্ত কোনও গবেষণাকেন্দ্র আদতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল একটি স্থান। তার আশেপাশেই যদি অনুপ্রবেশকারীরা ঘাঁটি গাড়ে, তাহলে তার ফল মারাত্মক হতে পারে।
অভিযোগ, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তরফে প্রতিনিধিরা একাধিকবার স্থানীয় থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন। কিন্তু, তাঁদের সেই অভিযোগে পুলিশ প্রশাসন সেভাবে কর্ণপাত করেনি বলে রাজ্যসভায় দাবি করেন শমীক।
বিজেপি সাংসদের এই অভিযোগ শুনে সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যসভার অন্দরে হট্টগোল শুরু করে দেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। তাঁর এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে পালটা দাবি করতে শুরু করেন তাঁরা।
তৃণমূল সাংসদদের এই মন্তব্য শুনে শমীকও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। তিনি বলেন, তাঁর কাছে এই অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ আছে। চাইলে সেই প্রমাণও পেশ করতে পারেন তিনি।
কিন্তু, তৃণমূল সাংসদরা সেসব না শোনায় কোনও আগ্রহ দেখাননি। বদলে তাঁরা শমীকের মন্তব্যের প্রতিবাদে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন।
পরে, রাজ্যসভায় তাঁর এই বক্তব্যের অংশটুকুর ভিডিয়ো ক্লিপিং নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেন শমীক ভট্টাচার্য। লেখেন, 'আমাদের রাজ্যে এই গুরুতর ঘটনা ঘটে চলেছে। আর রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন চোখ বুজিয়ে বসে রয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং গভীর উদ্বেগের বিষয়।'