লোকসভা ভোটে কার্যত একাহাতে স্বামীর হয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন তিনি। বিষ্ণুপুরে পদ্মফুল ফোটানোর অন্যতম কারিগর ছিলেন সৌমিত্র খাঁ'র স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ। আর সেই সুজাতা এবার যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস। জানালেন, তৃণমূলে যোগ দিয়ে ‘নিঃশ্বাস’ নিতে পারছেন।
সোমবার তৃণমূল ভবনে যোগদানের আগে সুজাতা বলেন, ‘দিনের শেষে আমরা সম্মান চাই। যোগ্যতার প্রকৃত বিচার-মর্যাদা চাই। কোনও দলে যদি যোগ্যতাই ক্ষুণ্ণ হয়, মর্যাদা পাওয়া না যায়, সেখানে থাকা মানে মূর্খামি।’ কিছুক্ষণ পরেই দমদমের সাংসদ সৌগত রায় এবং কুণাল ঘোষের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নেন সুজাতা। বলেন, ‘এত দিন পর প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি।’
সুজাতা অভিযোগ করেন, অন্য দলে যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাঁদের সাড়ম্বরে বিজেপিতে নেওয়া হচ্ছে। আর যাঁরা ‘প্রাণের ঝুঁকি’ নিয়ে বিজেপিতে ‘প্রাণপাত’ করেছেন, তাঁদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে রাজনৈতির মহলের মতে, বিজেপির সঙ্গে সুজাতার কয়েকদিন ধরেই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সূত্রের খবর, গত মাসে বঙ্গে অমিত শাহের সাংগঠনিক সভার ফেসবুক লাইভ করেছিলেন। সেজন্য বিজেপি নেতৃত্বের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিলেন বলে খবর মিলেছিল। তার কয়েকদিন পরেই স্বামীর প্রাক্তন দলে যোগ দিয়েছেন সুজাতা। তাতে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত তৃণমূল শিবির। বিষ্ণুপুরে সৌমিত্রের জয়ের জন্য সুজাতাকে ‘ক্যাপ্টেন’ বলেও উল্লেখ করেন সৌগত।
কিন্তু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শুরুতেই কিছুটা তাল কেটে ফেলেন সুজাতা। সৌমিত্র তৃণমূল ত্যাগের পর কীভাবে 'অত্যাচার' সহ্য করতে হয়েছিল, সেই বর্ণনা দেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আওতায় থাকা পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলেন। সুজাতা বলেন, '২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি আমার স্বামী সৌমিত্র খাঁ ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করল তৃণমূল কংগ্রেস পরিবার ছেড়ে, সেই দিন থেকে কী পরিমাণ অত্যাচার সহ্য করেছি, তা মনে হয়, আপনাদের কারও কাছে অজানা নয়। আমার বাপেরবাড়ি ভাঙচুর করে দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ২৬ দিন আমাদের বাড়িতে নিরীহ বাবা-মা'কে নিয়ে আমি অন্ধকারে কাটিয়েছি। যেন মনে হত কোথাও সমাজ-বিরোধী। দিনের পর দিন রাত ১১ টার পর বাড়িতে পুলিশের রেড সহ্য করেছি। বাড়ি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সহ্য করেছি। ১১ বছরের পুরনো চাকরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এত কিছু অত্যাচার সহ্য করেও আমি যখন লড়াইয়ে বেরিয়েছে, তখন মনে হয়েছে যে এটাই শেষদিন।' পরে কিছুটা ড্যামেজ কন্ট্রোল করে সুজাতা জানান, তিনি বিজেপির লাইনে বলতেন। যারা তাঁর উপর ‘অত্যাচার’ করেছিল, তাঁরা দুষ্কৃতীও হতে পারে।
তারই ফাঁকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা এবং সাংসদ অভিষেক বন্ধ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন সুজাতা। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না যে সুজাতা থেকে নেত্রী হয়ে উঠতে পেরেছি কিনা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এবং বিষ্ণুপুরের মানুষ আমায় ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। সেজন্যই আমি সুজাতা হয়ে উঠতে পেরেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাসী, আগামিদিনে প্রিয় দাদা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতা দিদি আমায় একেবারে নেত্রী করে তুলবেন।'