ঠিক তিনদিন আগে বিজেপি’র পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল নবান্ন চলো অভিযান করা হবে। এমনকী নবান্ন টলিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা–সাংসদরা। তখন এই অভিযানকে কিভাবে কমব্যাট করা হবে তা বুঝতে পারছিলেন না প্রশাসনের আমলারা। সূত্রের খবর, এই বিষয়টি নিয়ে পিকে’র সঙ্গে কথা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু পিকে কোনও রাস্তা দেখাতে পারেনি। অগত্যা বিষয়টি যায় মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। ততক্ষণে অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট শাহিনবাগ আন্দোলন নিয়ে রায় ঘোষণা করে দিয়েছে।
ব্যস, সমস্যার সমাধান। বুধবার রাতেই স্বরাষ্ট্র দফতর চিঠি পাঠায় বিজেপিকে। চিঠিতে আপত্তির কারণ হিসেবে চারটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণভাবে ঠাঁই পেয়েছে শাহিনবাগ নিয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়—এক, অভিযানের অনুমতি চেয়ে একবারে শেষ মুহূর্তে চিঠি পাঠানো হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে। দুই, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ– অনির্দিষ্টকালের জন্য জনসাধারণের রাস্তা আটকে দীর্ঘদিন আন্দোলন চলতে পারে না। এই ধরনের প্রতিবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কাউলের মতে, প্রশাসন মনে করলে ব্যবস্থা নিতে পারে। কী ব্যবস্থা, কীভাবে ব্যবস্থা, সেটা প্রশাসনই ঠিক করবে। তিন, করোনা পরিস্থিতিতে এত মানুষ রাস্তায় নামলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। চার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার নবান্ন বন্ধ থাকছে। কারণ সেখানে স্যানিটাইজেশনের কাজ চলবে। তাই সবাইকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই চতুর চালে কিস্তিমাত হয়ে যায় বিজেপি।
এখন নবান্ন অভিযান করাটা কার্যত হাস্যকর। কারণ অনেকেই বলছেন, বিজেপি ফাঁকা মাঠে গোল দিতে যাচ্ছে। যেখানে কেউ নেই সেখানে ঘেরাও বা অভিযান করে কী হবে? মুখ্যমন্ত্রী এখন জেলা সফরে। তাই তাঁকে বাগে পাবে না বিজেপি। সুতরাং বিজেপি’র এই অভিযান কার্যত হাসির খোরাক। যদিও বিজেপি’র বক্তব্য, এই আন্দোলনে ভয় পেয়ে রাজ্য সরকার পালিয়ে গেল। তবে রাজ্য সরকার এই আইনি চিঠি দিয়ে বিজেপি’র অভিযান কার্যত আটকে দিল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এই নিয়ে দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, বন্ধ তো এমনিতেই হয়ে যাবে আগামী বছর। এখন থেকেই বন্ধ হয়ে গেল।
কিন্তু বিজেপিও ছাড়বার পাত্র নয়। কারণ তারা ঘোষণা করে দিয়েছে নবান্ন অভিযানের কথা। সেখানে তা না করলে অক্সিজেন পেয়ে যাবে শাসকদল। তাই ব্যাকফুটে যেতে পারবে না গেরুয়া শিবির। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি যুব মোর্চার ডাকা নবান্ন অভিযান ঘিরে তত্পর হাওড়া কমিশনারেটের পুলিশ। মিছিল আটকাতে সবকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসেছে ব্যারিকেড। মোতায়েন কমব্যাট ফোর্স। বিজেপি’র নজরে একুশ। তাই এই ঘোষিত অভিযান করতেই হবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গোটা শহরকে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি সেক্টরে একজন করে ডিআইজি পদমর্যাদার আধিকারিক থাকবেন দায়িত্বে। কলকাতা ছাড়া হাওড়া শহরে দুই প্রান্ত থেকে দুটি মিছিল যাবে নবান্নে। একটি সাঁতরাগাছি বাস স্ট্যান্ড হয়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ক্যারি রোড হয়ে যাবে নবান্নে। আর একটি মিছিল হাওড়া ময়দান থেকে শুরু হয়ে জিটি রোড অথবা ফোরসর রোড ধরে এগোবে। যেখানে থাকার কথা তেজস্বী সূর্যের। এছাড়াও আন্দুল রোডের লক্ষীনারায়ণ তলাতে মিছিল আটকাতে থাকবে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়। প্রত্যেকটি বলয়ে থাকছে কমব্যাট ফোর্স, র্যাফ এবং রোবোকপ। থাকছে জলকামান। চলবে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি।
বিজেপি সূত্রে খবর, কলকাতা এবং হাওড়ার চারটি পয়েন্ট থেকে মিছিল শুরু হবে। ওই চারটি পয়েন্ট থেকেই বেলা ১২টা নাগাদ মিছিলগুলি নবান্নের দিকে এগিয়ে যাবে। রাজ্য বিজেপির সদর দফতর থেকে যে মিছিলটি নবান্নের দিকে যাবে, সেটিতে থাকবেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। হেস্টিংস থেকে নবান্নে যাওয়া মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়। হাওড়ার সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হওয়া মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন রাজ্য বিজেপি’র সহ–সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। হাওড়া ময়দান থেকে শুরু হওয়া মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এবং বিজেপি যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য। তবে দু’লক্ষ লোকের জমায়েত করে কীভাবে বৃহস্পতিবার কলকাতা অচল করে দেওয়া যায় এখন সেটাই টার্গেট।
সূত্রের খবর, আগামী ১৬ এবং ১৭ তারিখ উত্তরবঙ্গ সফরে আসতে চলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিধানসভা ভোটের রূপরেখা তৈরি করতেই যে অমিতের বঙ্গ–সফর, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সেখানে এত বাধা সত্ত্বেও নবান্ন অভিযান কতটা সফল তা তুলে ধরতে চায় বিজেপি নেতারা। তাই এই অভিযান আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি’র কর্মসূচি ঘিরে আজ শহর উত্তপ্ত হতে পারে বলে অনেকের শঙ্কা। তা নিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘প্রশাসন প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করবে।’