মহারাজ কি রাজধর্ম পালন করবেন? ফেসবুকে এক আলাপচারিতায় এই জিজ্ঞাস্য স্পষ্টত নাকচ করলেন স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজ। পরিষ্কার বললেন, ‘আমরা স্বামীজির দাসানুদাস। তিনি বলেছেন, আমাদের অর্থাৎ সন্ন্যাসীদের কোনও রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকবে না। সুতরাং, রাজনৈতিকভাবে আমরা কোনওদিনও সরব হব না। এটা আমরা শিববাক্য হিসেবে মানি। তাই রাজনীতিতে যোগ দেব কী না দেব তা নিয়ে কোনও প্রশ্নই উঠছে না।’
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে অনেক দিন ধরেই কানাঘুষো চলছে, তিনিই নাকি হাল ধরবেন রাজ্য বিজেপি–র। আরএসএস তো খুবই উচ্ছসিত। ২০২১–এ লোকসভা নির্বাচনে নাকি বিজেপি–র হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন গেরুয়াধারী স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজ! কিন্তু কে এই মহারাজ? এ বছরই ফেসবুকে তাঁর কথা জানতে পারে সারা পৃথিবী। অবাক হয় আপামর বাঙালি।
আসল নাম দেবতোষ চক্রবর্তী। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াশোনা। মাধ্যমিকে রাজ্যে পঞ্চম, উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে সপ্তম, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় মেডিক্যাল র্যাঙ্ক ১৭। গান, কবিতা, আঁকাবুকি, নাটক, অভিনয়, খেলাধুলো— সবেতেই পারদর্শী। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস–এ অসাধারণ রেজাল্ট। দিল্লি এইমস–এ এমডি হয়ে হার্ট নিয়ে বিস্তর গবেষণা করতে মার্কিন মুলুকে পাড়ি। সেখানে গিয়ে আচমকা নিখোঁজ।
গিয়েছিলেন দেবতোষ। কিন্তু যিনি ফিরলেন তিনি স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজ। মুন্ডিতমস্তক, গেরুয়াধারী এবং বেলুড় মঠের আরোগ্য ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত। চলতি বছরেই ফেব্রুয়ারি মাসে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দেবতোষের এই জীবনগাথা জানতে পারে সকলে। তাঁর অদ্ভুত জীবনী অনেকেরই অনুপ্রেরণা। তাঁর গাওয়া গান, ধর্মীয় বক্তব্য, তাঁর ব্যক্তিত্ব বিশ্বব্যাপী বাঙালির মনে কৌতুহল জাগিয়েছে— ‘স্বামীজি কি ফিরে এল?’
একই সময় কৌতুহল জাগে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যেও। বাংলায় বিজেপি–র প্রধান মুখের খোঁজ চলছে বহুদিন। সামনে লোকসভা নির্বাচন। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের মতো আরেক গেরুয়াধারী, যাঁর এত ব্যাপ্তি, তিনি যদি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হন, তা হলে বিজেপি–র পাল্লা ভারী হবে তা স্পষ্ট। কিন্তু সন্ন্যাসী কি রাজা হবেন?
মহারাজ বলছিলেন, ‘স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে জাতীয়তাবাদীর ইতিহাসে প্রাণপুরুষ হয়ে আছেন। সে কথা সকলেই জানে। কিন্তু রাজনীতি আমাদের জন্য নয়।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘রাজনীতির নীতি, ধর্মনীতির নীতি— কোনও কিছুই কি মানুষ থেকে আলাদা? আমি স্বার্থ নিয়ে যে নীতিতে যাব তাতেই অসফল হব। সত্যি বলতে, রাজনীতির চূড়ান্ত লক্ষ্যের বাইরেও যে সমস্যা মানবজাতির চুলের মুঠি ধরে আছে, আমরা সেই সমস্যা সমাধান করতে শিখছি।’
বোঝাই যাচ্ছে, আরএসএস ও বিজেপি–র দিবাস্বপ্নের সঙ্গে স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজের বাস্তবের দূরত্ব আলোকবর্ষ সমান।