কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বারবার বলেও বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অন্তর্কলহ এবং কোন্দল থামাতে পারেনি। আর সেটা যে এখনও আছে তা সামনে চলে এল। এমনকী এইসব দোষ যে একেবারে উপরতলায় রয়েছে সেটা প্রকাশ্যে আসতেই নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। শীর্ষ পদে বসে থেকেও একে অপরকে এড়িয়ে চলছেন বঙ্গ–বিজেপির নেতারা বলে অভিযোগ। স্যালাইন কাণ্ডকে হাতিয়ার করে বিজেপি এখন রে রে করে পথে নেমে পড়েছেন। স্বাস্থ্যভবন অভিযান করতেই দলের অন্দরের ফাটল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সোমবার স্বাস্থ্যভবনের সামনে বিজেপির অবস্থান–বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সেই মঞ্চে সুকান্ত মজুমদার এবং দিলীপ ঘোষকে দেখা গেল। কিন্তু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অনুপস্থিত রইলেন। তাতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে।
আজ, মঙ্গলবার সল্টলেকের হোটেলে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক বসেছে। সেখানে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে স্ট্র্যাটেজি ঠিক হচ্ছে। অথচ দলের অন্দের রয়ে গিয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন প্রসূতি ও এক সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়। সেটা নিয়েই বিরোধীদের অভিযোগ ‘বিষাক্ত’ স্যালাইন দেওয়ার জেরেই এমন মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের গ্রিন করিডর করে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। এই ঘটনা নিয়েই সোমবার স্বাস্থ্যভবন অভিযান করে বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি তোলেন তাঁরা। যদিও তাতে খুব একটা বড় জমায়েত হয়নি।
আরও পড়ুন: ‘নির্বাচনের সময় ওরা শুধু বৈষম্য করতে আসে’, গঙ্গা ভাঙন নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ মমতার
এদিকে বিজেপির এই কর্মসূচিতে যা দেখা গেল তারপর ২০২৬ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে কতটা সাফল্য আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে রাজ্য রাজনীতিতে। এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যদি উপরতলায় দেখা যায় তাহলে নীচুতলায় কোন বার্তা যাবে? এদিনের এই কর্মসূচিতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দেখা মেলেনি। বঙ্গ– বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব এভাবেই প্রকাশ্যে চলে আসে। সূত্রের খবর, শুভেন্দু অধিকারীর বিশেষ কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজও ছিল না সোমবার। গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে তো দল জানত। দলের কাছে এমন কোনও খবর নেই। তাহলে কি সুকান্তর ডাকা এই কর্মসূচি এড়িয়েছেন শুভেন্দু? উঠছে প্রশ্ন।
অন্যদিকে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অন্তর্কলহ এবং কোন্দল রাজ্য বিজেপিতে নতুন কিছু নয়। শীর্ষ নেতাদের থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জেলায় এটা দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালেও বঙ্গ–বিজেপিতে রীতিমতো ঠান্ডা লড়াই চলত সুকান্ত–দিলীপ–শুভেন্দুর তিন লবির বলে সূত্রের খবর। দ্বন্দ্ব কাটিয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য একাধিকবার এই তিন নেতাকে বলা হয়েছে। একসঙ্গে বসিয়ে বৈঠকও করেছেন অমিত শাহ, জেপি নড্ডার মতো কেন্দ্রীয় নেতারা। কারণ এই লবিবাজির জেরেই ভোটের ফল খারাপ হচ্ছে। কিন্তু সোমবারের কর্মসূচি থেকে স্পষ্ট, সুকান্ত–দিলীপ একমঞ্চে এলেও শুভেন্দুর অনুপস্থিতি আবার ভাবাচ্ছে।