বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে কি এবার পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটের দিকে নজর বিজেপির? রবিবার দলের ভার্চুয়াল জনসভায় দিলীপ ঘোষে মুখে যেন শোনা গেল সেই সুর। সাধারণত বিজেপি নেতাদের ভাষণে উপেক্ষিতই থাকে এদেশের মুসলিম সমাজ। কিন্তু রবিবারের ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের জন্য মোদী সরকার কী করেছে তার খতিয়ান তুলে ধরলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। তাতেই অনেকের ধারণা, এবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নজরে মমতার দখলে থাকা মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক।
রবিবার পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের দুরবস্থার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি কাঠগড়ায় তোলেন দিলীপবাবু। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নীতি সব কা সাথ, সব কা বিকাশ। তাই সবার বিশ্বাস আমরা পেয়েছি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বিভাজনের রাজনীতি এখনো শেষ হয়নি। এখন ভোট এসেছে বলে মুসলিম সমাজের কথা মনে পড়েছে। তাদের সব থেকে গরিব ও অবহেলিত করে রাখা হয়েছে। তারা না কি চাকরি পান না। শিক্ষা পান না।‘
দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘যান মুসলমান পাড়াগুলোতে। রাস্তা নেই। স্কুলে শিক্ষক নেই। বাড়ির ছাদ নেই। মহিলাদের গায়ে কাপড় নেই। যদি থাকে তাহলে বাড়িতে গ্যাস আছে। নরেন্দ্র মোদী দিয়েছেন। পাকাবাড়ির ছাদ যদি থাকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পেয়েছেন। বাড়িতে শৌচালয় থাকলে মোদীজির পাঠানো টাকাতে সেটা হয়েছে। আর আজকে ভেঙে গিয়েছে বাড়ি, তারও সহায়তার জন্য কেন্দ্রের টাকা আসছে। এই যে অসময়ে রেশন পাচ্ছেন। চাল-ডাল-তেল পাচ্ছেন সেটাও মোদীজি দিয়েছেন। বাজার করার ৫০০ টাকা পাচ্ছেন। মমতা ব্যানার্জি কিছু তো দেয়ইনি, উলটে তাদের পেটে লাথ মেরে তাদের রেশন খেয়ে নিয়েছে। মিড ডে মিলের চাল খেয়ে নিচ্ছে। বাড়ি বানানোর টাকা খেয়ে নিচ্ছে।‘
রাজ্যের মুসলিমদের জন্য কেন্দ্রীয় অবদান মনে করিয়ে দিলীপ ঘোষ জানান, ‘আমাদের পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৮ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। মুসলিমবহুল ৩৬টি ব্লকে কেন্দ্রীয় সরকার প্রচুর সাহায্য করেছে। ৩০টি আইটিআই কলেজ ও ৬টি পলিটেকনিক তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে খরচ হয়েছে ২১৫.৫৪ কোটি টাকা। এছড়া ছাত্রছাত্রীদের হস্টেলও তৈরি করে দিয়েছে। বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করেছে।‘
এছাড়া দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ওস্তাদ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা সংখ্যালঘুদের প্রশিক্ষিত করার চেষ্টা হচ্ছে। মহিলাদের জন্য মঞ্জিল প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা হচ্ছে। হুনর হাটের মাধ্যমে মুসলিমরা উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। মমতা ব্যানার্জি শুধু রাজনীতি করেছেন আর ধোঁকা দিয়েছেন, আজ মুসলিম সমাজ সেটা বুঝতে শুরু করেছে। কেবলমাত্র বিজেপির ভয় দেখিয়ে মুসলমানদের এক জায়গায় করে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাই তারা আরও গরিব হয়েছেন, অসহায় হয়েছেন।‘
সাধারণত নির্বাচনে মুসলিম ভোটকে গুনতির মধ্যে রাখে না বিজেপি। উত্তর প্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যের নির্বাচনে একজনও মুসলিম প্রার্থীকে ভোটে দাঁড় করায়নি বিজেপি। যাতে হিন্দু ভোটারদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অংকটা যে আলাদা তা জানেন বিজেপি নেতারা। তাই রাজ্যের ২৮ শতাংশ মুসলিম ভোটে ভাগ বসাতে চায় বিজেপি। হিন্দু ভোট কবজায় আসার পর কি তাই সেদিকে হাত বাড়ালেন দিলীপবাবুরা?